ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
সম্প্রতি ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী পাইলট সাফিয়া ফিরোজীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করেছে তালেবানরা।
ছবি দুটির একটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি ধ্বংসস্তূপের মাঝে একজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় আহাজারি করছেন। দ্বিতীয় ছবিতে একজন নারীকে উড়োজাহাজের ককপিটে পাইলটের আসনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
মূলত ভারতের অসংখ্য ফেসবুক ও টুইটার আইডিতে ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে এসংক্রান্ত পোস্টগুলো দেখুন এখানে।
গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে প্রথম ছবিটি ‘মার্ডার অব ফারখুন্দা মালিকজাদা’ নামের উইকিপিডিয়ার একটি পেজে খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পেজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আহত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা নারীর নাম ফারখুন্দা মালিকজাদা।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ওই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের ৭ মে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোরআন পুড়িয়েছেন—এমন গুজবের জেরে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ গণপিটুনিতে মারা যান ২৮ বছর বয়সী ওই নারী।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তদন্ত করে জানায়, ফারখুন্দা মালিকজাদা নির্দোষ ছিলেন। স্রেফ সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার ইউটিউব চ্যানেলে এসংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল আলজাজিরার ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে এটি আপলোড করা হয়। ওই ভিডিওতেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
ওই ভিডিওর শুরুতেই সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ছবিটি দেখা যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়েছিল।
দ্বিতীয় ছবিটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে পাওয়া যায় সংবাদ সংস্থা এপির ওয়েবসাইটে। ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভাইরাল পোস্টের ওই তরুণীর নাম সাফিয়া ফিরোজী। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর টার্বোপ্রপ উড়োজাহাজের পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার সময় তাঁর এই ছবি তোলা হয়। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর।
কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমেই সাফিয়া ফিরোজীর নিহত হওয়া বা কোনো কারণে মৃত্যুর খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সিদ্ধান্ত
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী পাইলট সাফিয়া ফিরোজীকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে—এমন দাবি করে ফেসবুকে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি পুরোনো। ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ কোরআন পোড়ানোর গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন নির্দোষ ফারখুন্দা মালিকজাদা নামে এক নারী। ছবিটি সেই ঘটনার। পাইলট সাফিয়া ফিরোজীকে হত্যা করা হয়েছে—এমন তথ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।