‘মাথার ভেতরে ছিল এলভিস প্রিসলি, খাতার ভেতর তোমার নাম’, অঞ্জন দত্তের ম্যারি অ্যান গানের লাইন এটি। এতেই বোঝা যায় প্রিসলি মার্কিল মুলুকের গণ্ডি পেরিয়ে সুদূর ভারতীয় উপমহাদেশেও কতোটা প্রভাব ফেলেছেন। রক অ্যান্ড রোলের সেই রমরমার যুগে এলভিস প্রিসলি ছিলেন এক কিংবদন্তি।
একই সময়ে একই দেশে শোবিজ দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইতিহাসের লাস্যময়ী তারকাদের একজন মেরিলিন মনরো। তিনি একাধারে অভিনেত্রী, মডেল এবং গায়িকা। এলভিস প্রিসলি ও মেরিলিন মনরো স্ব স্ব ক্ষেত্রের দুটি বড় নাম। মনরো ছিলেন প্রিসলির নয় বছরের বড়। তাঁদের কী কখনো দেখা হয়েছিল?
প্রিসলি ও মনরোর কখনো দেখা হয়েছিল কি না বা তাঁদের কোনো গ্রুপ ছবি আছে কি না সে ব্যাপারে আর কোনো নথিপত্র পাওয়া যায় না বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ছবিটি এলো কোত্থেকে?
স্নোপস ভুয়া তথ্য শনাক্ত নিয়ে কাজ করা এক্স অ্যাকাউন্ট ফেক হিস্ট্রি হান্টারের বরাত দিয়ে জানায়, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তোলা এলভিস প্রিসলি ও মেরিলিন মনরোর দুটি আলাদা ছবি জুড়ে দিয়ে ভাইরাল ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
এলভিস প্রিসলি ও মেরিলিন মনরো
১৯৫০ থেকে ৭০–এর দশকে জেল হাউজ রক, ক্যান্ট হেল্প ফল ইন লাভ, হার্ট ব্রেক হোটেল, ক্যান্টাকি রেইন, মিস্ট্রি ট্রেন–এর মতো মঞ্চ কাঁপানো সব গান দিয়ে ওই সময়ের তরুণ–তরুণীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন এলভিস প্রিসলি। তবে ‘দ্য কিং অব রক অ্যান্ড রোল’ খ্যাত এই তারকার জীবনের শুরুটা ছিল খুবই সাদামাটা, আর্থিক টানাপোড়েনে। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের মিসিপিসিতে। এলভিস প্রিসলির ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় ১৯৫০–এর মাঝামাঝিতে। ওই সময় থেকে তিনি রেডিও, টিভি, টেলিভিশন এবং মঞ্চে পারফর্ম করতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম একক গান ছিল ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত ‘দ্যাটস অলরাইট।’
প্রিসলির গান গাওয়ার ভিন্ন ধাঁচ, আবেদনময় দৈহিক গড়ন ও সুদর্শন চেহারার জন্য ১৯৫৫ সাল থেকে তাঁর বিপুল ভক্ত তৈরি হতে শুরু করে। এরপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি প্রিসলিকে। গান, অভিনয় সব জায়গায় ছিল তাঁর জয়জয়কার। এর পরের বছর ১৯৫৬ সালে প্রথম ও বক্স অফিস হিট চলচ্চিত্র লাভ মি টেন্ডার–এ অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারজুড়ে প্রিসলি আমেরিকায় রক অ্যান্ড রোল মিউজিক জনপ্রিয় করতে কাজ করে গেছেন, তিনবার জিতেছেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। ১৯৭৭ সালে মাত্র ৪২ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান ‘দ্য কিং অব রক অ্যান্ড রোল’।
এলভিস প্রিসলির মতো মেরিলিন মনরোর জীবনের শুরুটাও ছিল যুদ্ধের। সেই যুদ্ধ জয় করে মনরো হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম ‘যৌনতার প্রতীক’। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো ২০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করেছে। নাট্যকার আর্থার মিলার, যুক্তরাষ্ট্রের বেসবল খেলোয়াড় জো ডিমাজিও এবং দেশটির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির মতো বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর নাম জুড়ে আছে। তাঁর বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্র হচ্ছে— দ্য অ্যাসফল্ট জাঙ্গল, অল অ্যাবাউট ইভ, নায়াগ্রা, জেন্টলম্যান প্রেফার ব্লন্ডিস ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘জেন্টলমেন প্রেফার ব্লন্ডিস’ সিনেমার আয় ছিল নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ। তাঁর ‘হাউ টু ম্যারি এ মিলিয়নেয়ার’ সিনেমাটিও বক্স অফিসে সাড়া ফেলে। তবে মনরোও ছিলেন ক্ষণজন্মা। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মাত্রাতিরিক্ত মাদকগ্রহণে তাঁর মৃত্যু হয়।