২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
‘শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে এমন একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। মির্জা ফখরুলের ছবি এবং ওই বক্তব্য সংবলিত একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফটোকার্ডে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের লোগোও যুক্ত করা হয়েছে।
‘Sheikh EmOn’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শনিবার রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে পোস্ট করা যমুনা টেলিভিশনের লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই পোস্টে ১ হাজার ৫০০ রিঅ্যাকশন পড়েছে, কমেন্ট পড়েছে ১৭৩টি ও শেয়ার হয়েছে ২৭৫। ‘মিঠাপুকুর আওয়ামীলীগ পরিবার’ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্টটিও বেশ ছড়িয়েছে। এতে ১ হাজার ৪০০ রিঅ্যাকশন পড়েছে।
এসব পোস্টের কমেন্টে অনেকে এটিকে ভুয়া তথ্য বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে দাবিটিকে সত্য ভেবেও কমেন্ট করা হয়েছে।
Md Julahss Dewon নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘ধন্যবাদ মীরজাফফরুল ইসলাম সাহেব আপনাকে আপনি ঠিক বুঝতে পেরেছেন ঠিক বলেছেন এই বাংলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি থাকবে বাকি সবআবর্জনা নিশ্চিন্ত যাবে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
শ্রাবণী সায়নি লিখেছেন, ‘ঠিক বলেছেন ঐক্য হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।’ (বানান অপরিবর্তিত)
এটি যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড কিনা, তা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইউটিউবে এমন কোনো ফটোকার্ড কিংবা এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৯ মার্চ যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিটে ‘রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন মির্জা ফখরুল’ এমন তথ্যে একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। তবে এই ফটোকার্ডে ‘শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর’ এমন লেখা নেই।
পাশাপাশি যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের কিছু অমিল দেখা যায়। যমুনা টেলিভিশনের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ফটোকার্ডের ফন্টের সঙ্গে ভাইরাল ফটোকার্ডটির ফন্টের মিল নেই। এ ছাড়া ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে প্রকাশের তারিখ উল্লেখ নেই। সাধারণত যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ডে তারিখ উল্লেখ থাকে।
যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজের এই ফটোকার্ডের কমেন্টে সংবাদ মাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের লিংকও যুক্ত রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার চলতে পারে না। মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামবে বিএনপি।’
এই প্রতিবেদনে ‘শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’ মির্জা ফখরুলের এমন কোনো বক্তব্য নেই। পাশাপাশি একই বক্তব্য গুগলে সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যমুনা টেলিভিশনের নিউ মিডিয়া বিভাগের প্রধান রুবেল মাহমুদকে ফটোকার্ডটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যমুনা টেলিভিশন এমন ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। এটি ভুয়া।’
সুতরাং, ‘শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্য করেননি। যমুনা টেলিভিশনের নামে ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হচ্ছে।