Ajker Patrika
হোম > ফ্যাক্টচেক > জানি, কিন্তু ভুল

স্প্যানিশ ফ্লুর উৎপত্তি কি স্পেনে?

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

স্প্যানিশ ফ্লুর উৎপত্তি কি স্পেনে?

শুরুতে এর নাম স্প্যানিশ ফ্লু ছিল না। এই নামকরণ হয়েছিল অনেক পরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মনোবল বজায় রাখার জন্য জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক জরিপে অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখানো হয়েছিল। দেশগুলোর সরকার চায়নি তাদের জনগণ নিজ দেশে এমন রোগের কথা জানতে পারুক।

সে সময় স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলো মহামারিটির প্রভাব নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পেরেছিল। রাজা ত্রয়োদশ আলফানসো ও তাঁর মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য যখন বিশেষ সেই ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তখন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম সেই খবর বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের কারণে তখন ইউরোপে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসের কথা শোনা যায়। যদিও এর আগেই ইউরোপে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নেতারা সে সময় ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে স্পেনের নাম প্রচার করেন। ফলে তখন ভাইরাসটির নাম হয়ে যায় ‘স্প্যানিশ ফ্লু’।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ফান্সটনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ফান্সটনে মোট ৫০ হাজার সেনা থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ১৯১৮ সালের মার্চের শুরুতে প্রথমে এক সেনাসদস্য জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় আরও শতাধিক সেনাসদস্য একই কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

এই ভাইরাসের কথা এখানে প্রথম জানা গেলেও এর উৎস দেশ সম্পর্কে আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

একই জায়গায় বহুসংখ্যক সেনাসদস্য থাকার কারণে সেখানে খুব সহজেই রোগের বিস্তার ঘটেছিল। পরে এপ্রিলে যখন মার্কিন সেনারা নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপের যুদ্ধের ময়দানে আসে, তখন তারা সঙ্গে করে সেই ভাইরাসও নিয়ে আসে। এরপর তাদের থেকে এই ভাইরাস ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। স্প্যানিশ ফ্লুর হাত থেকে পৃথিবীর কোনো অংশই ছাড় পায়নি। এশিয়া, আফ্রিকাসহ প্রশান্ত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।

ইউরোপ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ ভাইরাসে সংক্রমিত হনঅথচ স্প্যানিশরা এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ফরাসি সেনাদের সন্দেহ করেছিল, কিন্তু তাদের হাতে শক্ত কোনো প্রমাণ ছিল না। তখন তারা এই মিথ্যা অপবাদ ঘোচানোর জন্য অভিনব এক উপায় বের করে। রাজধানী মাদ্রিদের জারজুয়েলা থিয়েটারে ডন জুয়ানের একটি মিথ মঞ্চায়নের সময় ‘দ্য সোলজার অব নেপলস’ নামে একটি গান খুবই জনপ্রিয় হয়। এই গান সেই ভাইরাসের মতোই দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে স্প্যানিশরা ভাইরাসটিকে ‘সোলজার অব নেপলস’ নাম দেয়।

স্প্যানিশ ফ্লুতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয় এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। এখানকার দেশগুলোতে মৃত্যুর হার ইউরোপের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ছিল। অথচ ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এই হার ছিল সর্বনিম্ন।

১৯১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ কোটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু, যা সেই সময়ে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক–চতুর্থাংশ। আনুমানিক ৫ কোটি, মতান্তরে ১০ কোটি মানুষ এতে মারা যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মিলিত মৃত্যুর সংখ্যার চেয়েও এই সংখ্যা বেশি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

ঘামের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

মধু খেলে অ্যালার্জি ভালো হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

কফি পানে মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়— প্রচলিত ধারণাটি কি বিজ্ঞানসম্মত

লেবু, রসুন, আদা, ভিনেগারের মিশ্রণ খেলে রক্তনালির ব্লকেজ কাটে! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

চর্বি মানেই অস্বাস্থ্যকর? চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে

নিয়মিত আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না! চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে

মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে ধানের ওপর নকশা— ভাইরাল ছবিটির পেছনের ঘটনা জানুন

সন্তান প্রসবে নারীর ৫৭ ‘ডেল’ ব্যথা অনুভব হয়, যা ২০টি হাড় ভাঙার ব্যথার সমান— দাবিটির সত্যতা জানুন

আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চোখাচোখি হলেই কি চোখ ওঠে, কী বলে চিকিৎসা বিজ্ঞান