বাংলাদেশে শীতকাল চলছে। শীতের সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে মানুষ নানা ধরনের মৌসুমী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই মৌসুমে হাঁচি, কাশি, সর্দির প্রকোপ দেখা যায়। শীতকালে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে চোখ ওঠা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগের নাম কনজাংটিভাইটিস। এটি ভাইরাসজনিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগটি রেড/পিংক আই নামেও পরিচিত। এটিযে শুধু শীতকালে ছড়ায় এমন নয়। কনজাংটিভাইটিস বছরের যেকোনো সময়েই ছড়াতে পারে।
তবে এই রোগ নিয়ে লোকমুখে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের দিকে কেউ তাকালে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হন। সত্যিই কি তাই?
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক চক্ষু চিকিৎসক এবং সার্জনদের সংগঠন ‘আমেরিকান একাডেমি অব অফথ্যালমোলজি’– এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি প্রশ্নোত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। প্রশ্নটি ছিল এমন, ‘পিংক আই রোগে (কনজাংটিভাইটিস) আক্রান্ত রোগীর চোখের দিকে তাকালে কি কেউ এই রোগে আক্রান্ত হবে?’ এই প্রশ্নের জবাব দেন আমেরিকার আরজিএস মেডিকেল সার্ভিসেস পিএ’র চক্ষুবিশেষজ্ঞ রিচার্ড জি শুগারম্যান। তিনি জানান, আক্ষরিক অর্থে আলোক রশ্মির মাধ্যমে জীবাণু এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে না। কনজাংটিভাইটিস সাধারণত সংস্পর্শ ছাড়া ছড়ায় না।
তিনি আরও জানান, সহজভাবে বলতে গেলে, কনজাংটিভাইটিসে সংক্রমিত হতে হলে কাউকে স্পর্শের আওতায় আসতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত কেউ তাঁর চোখ ঘষার পর দরজার হাতল স্পর্শ করলে, পরে অন্য কেউ সেই হাতল স্পর্শ করার পর সেই হাত দিয়ে চোখ ঘষলে তিনিও সংক্রমিত হবেন।
কানাডা ভিত্তিক চক্ষু স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানড. বিশপ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস–এর তথ্য মতে, শুধু কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের দিকে সরাসরি তাকালে সেই ব্যক্তির মধ্যেও এই রোগ ছড়াবে, এই ধারণাটি মূলত প্রচলতি ধারণা। সাধারণত কৌতূহলী স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে এই ধারণা নিয়ে আলোচনা হতে বেশি দেখা যায়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, কনজাংটিভাইটিসের ধরনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই বাতাস বা বায়ুবাহিত কণার মাধ্যমে ছড়ায় না। কনজাংটিভাইটিস নিয়ে আরও কিছু ভ্রান্ত ধারণা হলো— এটি অ্যালার্জি, বায়ুদূষণ এবং রাসায়নিক প্রভাবে (পেট্রল বা কেরোসিন পোড়া ধোয়া ইত্যাদি) হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কারণে চোখে লালভাব ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে। আর এগুলো কখনো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় না।
ভারত ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স হেলথকেয়ারের চিকিৎসক এবং ম্যাক্স স্পেশালিটি সেন্টারের চক্ষুবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডা. সঞ্জয় ধাওয়ান জানান, কনজাংটিভাইটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। সেগুলো হচ্ছে, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখে অস্বস্তি, চোখ ফোলা, চোখ থেকে পানি ঝরা এবং ঝাপসা দেখা।
কনজাংটিভাইটিস হলে করণীয় হিসেবে তিনি পরামর্শ দেন— ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে, চোখে বরফ দিয়ে আলতো করে চাপ দিতে হবে, পুকুর বা সুইমিংপুলে সাঁতারকাটা যাবে না, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করা এবং সবাই ব্যবহার করে এমন গামছা বা তোয়ালে এবং প্রসাধনী ব্যবহার পরিহার করা।
ডা. সঞ্জয় ধাওয়ান আরও বলেন, কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির দিকে তাকালেই আক্রান্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।
কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের দিকে তাকালে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা, এই বিষয়ে আলোচনা করেন ভারতের মনিপালের কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান ডা. যোগীশ এস কামাথ। ভারতীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট অনলি মাই হ্যালথ–এর একটি নিবন্ধেতিনি বলেন, কনজাংটিভাইটিস চোখের দৃষ্টির মাধ্যমে ছড়ায় না।
তিনি আরও বলেন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি বা চোখের উপরিভাগের অন্যান্য সমস্যা নির্দিষ্ট প্যাথোজেনের সরাসরি সংস্পর্শ থেকে ঘটে। তেমনি কনজাংটিভাইটিসও একই ভাবে সরাসরি সংস্পর্শ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির দিকে তাকালেই অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে না।