কোভিড -১৯ শুরুর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হচ্ছে যে প্রতি শতাব্দীর ঠিক বিশতম বছরেই একটি বড় মহামারি আসে। বলা হচ্ছে ১৭২০, ১৮২০ ও ১৯২০ সালে তিনটি মহামারি এসেছে প্লেগ, কলেরা, ফ্লুর রূপ ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে এই করোনা মহামারি।
যে চারটি সময়কে মহামারীকাল হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে তা হলো- ১৭২০ সালের প্লেগ, ১৮১৭ সালের কলেরা ( পোস্টগুলোতে ১৮২০ সাল বলা হচ্ছে), ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু ও ২০১৯ সালের করোনাভাইরাস।
কিন্তু ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে ঠিক ১০০ বছর পর পরই মহামারী শুরু হয়, এই তথ্য পুরোপুরি সত্য নয়। বরং মহামারীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়কে দায়ী করা একটি কুসংস্কার।
বিশ্বে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া মহামারি:
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ দিকে গ্রিকরা মহামারি হিসেবে প্লেগের সঙ্গে পরিচিত হয়, যেটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য প্লেগ অব এথেন্স’। অবশ্য অনেক ইতিহাসবিদের মতে, মহামারিটি ছিল ইবোলা, টাইফয়েড, টাইফাস জ্বর, গুটিবসন্ত কিংবা অ্যানথ্রাক্স।
১৬৫-১৮৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পৃথিবীতে হানা দেয় ‘এন্টোনাইন প্লেগ’।
৫৪০-৫৪১ খ্রিষ্টাব্দে মিসর আক্রান্ত হয়েছিল ভয়াবহ এক মহামারি দ্বারা, যার নাম ‘জাস্টিনিয়ান প্লেগ’, যেটি চক্রাকারে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং এতে মোট আড়াই কোটির বেশি মানুষ মারা যায়। ধারণা করা হয়, ইউরোপের অর্ধেক মানুষই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এ সময়।
এরপর ১৩৩৪ সালেও প্লেগেই ইউরোপজুড়ে মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল আড়াই কোটি।
১৩৪৭-৫১ খ্রিষ্টাব্দ সময়ে ‘ব্ল্যাক ডেথ’, যা মূলত একধরনের প্লেগ, ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপজুড়ে। পরবর্তী ২০০ বছরে ব্ল্যাক ডেথের থাবায় মারা যায় অন্তত ১০ কোটি মানুষ।
নানাভাবে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তাদের কাঁপিয়ে দিয়েছে। এসব অসুখে হাজার থেকে শুরু করে কোটির অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
২০১৯ সালে চীনের উহান শহরে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মারা গেছেন সাড়ে আটাশ লক্ষাধিক মানুষ।
ফলে দেখা যাচ্ছে, এই যে প্রতি ১০০ বছরে মহামারি ছড়িয়ে যাওয়ার একটা তথ্য যে দিনের পর দিন ঘুরেছে ফেসবুকের নিউজ ফিড, পত্রিকার পাতায়, অনলাইন পত্রিকায় সেটা স্রেফ গুজব বৈ কিছুই নয়।