কিডনিতে পাথর এখন খুব সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী বা পুরুষ যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। দেরিতে ধরা পড়লে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
তবে ক্ষেত্র বিশেষে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিডনির পাথর দূর করা সম্ভব। যেমন, খুব ছোট আকারের পাথর দেখা দিলে পরিমাণ মতো পানি পানের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব হতে পারে। এমন ধারণা থেকে কিডনিতে পাথর জটিলতায় ভোগা অনেক ভুক্তভোগী ভেষজ চিকিৎসার শরণাপন্ন হন। এসব ভেষজ চিকিৎসা উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমেও।
বাংলানিউজ ২৪–এ গত ৬ আগস্ট লাইফস্টাইল পাতায় গত ৬ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শসার জলীয় অংশ দেহের বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ বের করতে দারুণ কাজ করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথর গলে যেতে সহায়তা হয়।
চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম সিএমজি বাংলা ২০২২ সালে নিজেদের ফেসবুক পেজেও এমন একটি পোস্ট করেছে। কিডনির পাথর গলাতে কার্যকর শসা শিরোনামে দেওয়া পোস্টটিতে দাবি করা হয়, এমন কিছু ভেষজ রয়েছে যেগুলো কিডনির পাথর গলাতে সহায়তা করে। এর মধ্যে একটি হলো শসা। শসায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ থাকে। সবচেয়ে বেশি থাকে জলীয় পদার্থ। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শসার এসব উপাদান কিডনির পাথর গলাতে খুব কার্যকর।
শসা কি কিডনির পাথর গলাতে পারে?
এই রোগের চিকিৎসায় শসার ভূমিকা নিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরুর কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফিজিশিয়ান ডা. গণেশ শ্রীনিবাস প্রসাদ দেশটির স্বাস্থ্য বিষয়ক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দ্য হেলদি ইন্ডিয়ান প্রজেক্টকে (থিপ) বলেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে উচ্চ আর্দ্রতার কারণে কিডনিতে পাথর হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এটি পানিশূন্যতার কারণে হতে পারে। কিডনির পাথরের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। প্রতিটি ধরনের পেছনে রয়েছে আলাদা কারণ। যেমন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা সংক্রমণ। একবার কিডনিতে পাথর দেখা দিলে, চিকিৎসা ছাড়া তা অপসারণ করা কঠিন। চিকিৎসাও পাথরের ধরনের ওপর নির্ভর করে। তবে নতুন করে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমানোর উপায় আছে।
ডা. গণেশ বলেন, শসা কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে পারে—এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বরং কিডনির পাথর থেকে বাঁচতে শরীরের পানির ভারসাম্য রাখা, লবণ খাওয়া কমানো, স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা, ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং উচ্চ অক্সালেটযুক্ত খাবার এড়ানোর মতো জীবনধারার পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। এর বাইরে খাদ্যাভ্যাসে মাংস, চিনি, কার্বোহাইড্রেট সীমিত করা এবং অ্যালকোহল এবং ধূমপান এড়ানোও কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।
শসা কিডনির পাথর গলাতে পারে এমন দাবিকে ভুল বলেছেন ভারতের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সংবাদভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম মেডিকেল ডায়ালগসকে পুনের মনিপাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট অঙ্কিত শর্মা। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এমন কোনো খাবার নেই, যা কিডনির পাথর দ্রবীভূত করতে পারে। তবে, শসা এবং অন্যান্য সালাদ জাতীয় সবজি কাঁচা খাওয়া হলে, সেগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে নতুন পাথর তৈরি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ঢাকার অ্যাডভান্সড সেন্টার অব কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজির (আকু) চেয়ারম্যান ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সোহরাব হোসেন সৌরভ হাসপাতালটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের রোগীদের অনেকেই আসেন, যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে, আমরা যতই বলি চিকিৎসা করানো এবং অস্ত্রোপচার করে পাথর বের করা প্রয়োজন, তাঁরা বলেন, অনেক দিন ধরে শসা খাচ্ছি! তার মানে রোগীর ধারণা হয়েছে, শসা এবং লেবু পানি খেলে পাথর গলে বেরিয়ে যাবে। তবে বাস্তব হলো, কিডনিতে পাথর হলে শসা খাওয়ায় কোনো কার্যকারিতা নেই। তার মানে আপনি যদি মণকে মণ শসা খান, শসা আপনার কিডনিকে কোনোভাবেই পাথরমুক্ত করতে পারবে না। আপনারা এটা বিশ্বাস করবেন না।’