সাহস মোস্তাফিজ
গত বছরের ২৬ এপ্রিল একটা ছবি গোটা দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ছবিটি তোলা হয়েছিল এমন এক শহরে, যেখানে ভালোবাসার নিদর্শন ‘তাজমহল’ দেখতে ছুটে যান বিশ্ববাসী। ওই ছবিও ছিল ভালোবাসার; মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীটির মুখে শ্বাস দিয়ে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা এক হতভাগ্য স্ত্রীর। করোনায় আক্রান্ত সেই লোককে বাঁচানো যায়নি।
গত ২৭ জুন রাজশাহীর আরেকটি ছবি নাড়িয়ে দেয় সবাইকে। ২৩ দিনের হাফসাকে বাঁচাতে মায়ের প্রাণান্ত আকুতির ছবিটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তার আগের দিন শনিবার হঠাৎ করেই হাফসার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওই সময় কোনো উপায়ান্তর না দেখে বাবা-মা হাফসাকে নিয়ে ছোটেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
ঘটনা দুটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়—‘সিপিআর’। কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআর হলো জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা কৌশল। সাময়িকভাবে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ কিছু সময় কৃত্রিমভাবে চালিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর পদ্ধতি। বুকে অনবরত চাপ দেওয়া থেকে শুরু করে মুখে শ্বাস দেওয়ার পুরো বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবেই স্বীকৃত। তবে প্রশ্নটা আসে তখনই, যখন রোগীটি কোভিডে আক্রান্ত হয়।
করোনায় আক্রান্ত রোগীকে মুখ দিয়ে শ্বাস দেওয়া কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ নয়। এতে সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকে। যদিও প্রিয় মানুষটি যখন মৃত্যু-যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে, চোখের সামনে দেহ নিথর হয়ে পড়ে, তখন কোনো যুক্তিই কাজ করে না। কিন্তু করোনাভাইরাস এমন এক ভয়ানক রোগ, যা থেকে বাঁচতে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্বই প্রথম শর্ত; এবার সে যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কোভিড আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তবে করোনাক্রান্ত কোনো মানুষের পাশে দাঁড়ালেই যে করোনার সংক্রমণ ঘটবে, বিষয়টা এমন নয়। এটি তখনই ছড়ায়, যখন সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা ড্রপলেটের সংস্পর্শে কেউ আসে। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরা, প্রয়োজনে পিপিই পরা ও বারবার হাত স্যানিটাইজ করা বা হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো, যারা এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে, তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। ‘কিস অব লাইফ’ এ ক্ষেত্রে মানবিক হতে পারে, কিন্তু মোটেও নিরাপদ নয়। বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।