স্কুল জীবনে শিক্ষকের মুখে গাধা খালি খায়নি এমন মানুষ কমই আছে। এ দেশে বোকাদের গাধা বলে বকা দেওয়া খুবই সাধারণ। এই গালি বহু ব্যবহারে এতোটা ভোঁতা হয়ে গেছে যে কেউ তেমন কিছু মনে করে না। মূলত বোকা বা নির্বোধ বোঝাতেই কাউকে এই নিরীহ প্রাণীটির সঙ্গে তুলনা করা হয়। অর্থাৎ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হলো, গাধা একটি নির্বোধ প্রাণী; তা না হলে নির্বিবাদে সারাজীবন মানুষের জন্য ভারী ভারী বোঝা বইবে কেন! গাধার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এই নীচু ধারণা কি সঠিক? বিজ্ঞান কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড বায়োমেডিকাল সায়েন্সেস কলেজের পশু চিকিৎসক নোরা ম্যাথিউস গাধার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বলেন, গাধা ঘোড়ার চেয়েও স্মার্ট প্রাণী। প্রকৃতপক্ষে এরা অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী, এরা ঘোড়ার মতো সহজে ভয় পায় না। বিপদের ঝুঁকি দেখলে গাধা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সম্ভবত এ কারণেই গাধাকে একরোখা বোকা প্রাণী বলে মনে করা হয়।
গাধার বেগার খাটুনি, ভারী বোঝা বহন করার দৃশ্য গল্প, সাহিত্য ও কার্টুনে অনেক পরিচিত হলেও নোরা ম্যাথিউস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশে শিকারি প্রাণী যেমন নেকড়ে, শিয়াল ইত্যাদি থেকে ভেড়ার পাল রক্ষায় গাধাকে প্রহরী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরা খুব দক্ষতার সঙ্গে এসব হিংস্র প্রাণীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
গাধা নিয়ে কাজ করে যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা দ্য ডানকি সেঙ্কচুয়ারি। সংস্থাটি একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে জানায়, প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ গাধাকে বুদ্ধিমান প্রাণী বলে মনে করে না। গাধার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মানুষের এমন ভুল ধারণা শতাব্দী প্রাচীন। এ ধারণার উৎপত্তি গাধার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থেকে। গাধা তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি দ্বারা চালিত হওয়ার চেয়ে আত্মরক্ষায় বেশি জোর দেয়। এর অর্থ হতে পারে যে, গাধাকে দিয়ে যে কাজটি করাতে চাওয়া হচ্ছে, গাধা তা করতে চাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গাধা কেন ওই কাজটি করতে চাচ্ছে না, মালিক তার অন্তর্নিহিত কারণগুলো সহজে খুঁজতে চান না। এখান থেকেই গাধা বুদ্ধিহীন প্রাণী— এমন ধারণার উৎপত্তি হতে পারে।
দ্য ডানকি সেঙ্কচুয়ারির ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, গাধা কুকুর ও ডলফিনের মতোই শিখতে পারে এবং সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে গাধার স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং শেখার সক্ষমতাও দারুণ।
গাধার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পোষাপ্রাণী বিষয়ক ওয়েবসাইট পেটকিন থেকে জানা যায়, গাধা প্রায় কুকুরের মতোই বুদ্ধিমান প্রাণী। আবার কারো কারো মতে, প্রাণীটি ডলফিনের মতো স্মার্ট। প্রাণীজগতের প্রখর স্মৃতিসম্পন্ন প্রাণীগুলোর একটি গাধা। এরা একবার ভ্রমণ করেই অনেক জটিল পথ বহুবছর মনে রাখতে পারে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, গাধা মানুষ ও অন্যান্য পশুর চেহারা মনে রাখতে পারে। কোনো গাধার মালিক বলেন, গাধা কাউকে একবার দেখলে আর তাকে কখনো ভোলে না।
গাধার জ্ঞানীয় সক্ষমতা নিয়ে স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পশু বিশেষজ্ঞের একটি গবেষণা ২০১৯ সালে জার্নাল অব ভেটেনারি বিহেভিয়ারে প্রকাশিত হয়। গবেষণাটির ফলাফলে তাঁরা জানান, মানুষের বুদ্ধিমত্তা মাপার একই পরিমাপে গাধাকেও বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে দেখা গেছে। তবে এর মানে এই নয় যে, গাধার বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে বেশি। কারণ, প্রাণী ও প্রজাতিভেদে প্রাণীর জ্ঞানীয় সক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
এসব সমীক্ষা ও গবেষণায় বোঝা যায়, গাধা বুদ্ধিহীন, বোকাপ্রাণী বলে যে শতাব্দী প্রাচীন ধারণা মানুষের মধ্যে রয়েছে সেটি সঠিক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে গাধার স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং এদের শেখার সক্ষমতাও দারুণ।