তেঁতুল বা টক জাতীয় ফল খেলে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়—এমন ধারণা বহুকাল ধরেই প্রচলিত। তাই অনেক সময় অস্ত্রোপচারের রোগী, জখম হলে টক জাতীয় ফল খেতে নিষেধ করা হয়। যদিও বিজ্ঞান বলছে, টক জাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। এই ভিটামিন দ্রুত ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ওয়েবসাইটে অস্ত্রোপচার পরবর্তী সময়ে কী কী খাওয়া যাবে এবং কী কী খাওয়া যাবে না তার একটি তালিকা পাওয়া যায়। হাসপাতালটির জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদের তৈরি এ তালিকায় তিন নম্বরেই রয়েছে বিভিন্ন ফল খাওয়ার পরামর্শ। এর মধ্যে আছে কমলা। অন্যান্য সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে কমলাতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কমলাতে ৫৯ গ্রাম ভিটামিন সি থাকে। একটি মাঝারি আকারের কমলায় ৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
অস্ত্রোপচারের পর যেসব খাবার খেতে বারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে— অ্যালকোহল, চিনিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং চিপস জাতীয় খাবার।
একই তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জনস মেডিকেল সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ক্ষতস্থান সারানোর জন্য ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন সি–এর ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন টক জাতীয় ফল, টমেটো ইত্যাদি। অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার ও বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার ক্ষত সারিয়ে ওঠার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমলা ছাড়াও যেসব ফলে ভালো মাত্রায় ভিটামিন সি পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে আছে— জাম্বুরা, কাঁচা আম, আমড়া, জলপাই ইত্যাদি। ৬১০ গ্রাম বা একটি খোসা ছাড়ানো জাম্বুরায় একজন মানুষের দৈনিক চাহিদার কয়েক গুন বেশি (৪১২ শতাংশ) ভিটামিন সি থাকে। আমের ক্ষেত্রে এক কাপ বা ১৬৫ গ্রাম কাঁচা আমে দৈনিক চাহিদার ৬৭ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আমড়ার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গ্রামে ৪৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদার ৫১ থেকে ৬১ শতাংশ পূরণ করে। যেখানে একজন পুরুষের দৈনিক ভিটামিন সি–এর চাহিদা ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ক্ষেত্রে ৭৫ মিলিগ্রাম।
ভিটামিন সি–এর রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটি পানিতে দ্রবণীয় জৈব অ্যাসিড, এ কারণে এই ভিটামিন শরীরে সঞ্চিত থাকে না। ফলে নিয়মিত বিভিন্ন উৎস থেকে গ্রহণ করতে হয়। ভিটামিন সি ক্ষত সারাতে যেভাবে কাজ করে:
১. কোলাজেন সংশ্লেষণ: কোলাজেন একটি প্রোটিন, যা ক্ষত নিরাময়ের জন্য কাঠামোগত রূপরেখা তৈরি করে। আর এই কোলাজেন উৎপাদনের জন্য ভিটামিন সি অপরিহার্য, যা নতুন ত্বককে শক্ত করতে এবং ক্ষত বন্ধ করতে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফলে এটি ফ্রি র্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে কোষকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ক্ষত নিরাময়কালের প্রদাহ পর্যায়ে এ ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হয় এবং ভিটামিন সি এদের নিষ্ক্রিয় করে টিস্যুগুলোর অধিকতর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়ার সময় সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি ফাইব্রোব্লাস্টসহ নতুন কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে, যা ক্ষত সারানোর জন্য প্রয়োজনীয় কোলাজেন এবং অন্যান্য উপাদান তৈরির জন্য আবশ্যক। এর ফলে দ্রুত নতুন টিস্যু তৈরি হয় এবং ক্ষত সেরে ওঠে।
৫. অ্যাঞ্জিওজেনেসিস: ভিটামিন সি ক্ষতস্থানের কাছে নতুন রক্তনালি (অ্যাঞ্জিওজেনেসিস) গঠনে উৎসাহিত করে, যা সেরে ওঠা টিস্যুতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।