বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো:
- রক্ত পরিশোধিত করে দূষিত বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া।
- হরমোন এরিথ্রোপয়েটিন তৈরি করা, যা শরীরে রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শরীরে পানি, খনিজ ও রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- ভিটামিন ডি তৈরি করা, যা হাড়ের সুরক্ষা দেয়।
কিডনি রোগের কারণ
আমাদের দেশের ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ কিডনির রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কারণ
- ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- নেফ্রাইটিস
- কিডনি সংক্রমণ
- বংশগত কিডনি রোগ
- ভাগকুলাইটিসএসএলই, পিএন ইত্যাদি
হঠাৎ সৃষ্ট কিডনি রোগ
- ডায়রিয়া ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা।
- শরীর থেকে হঠাৎ অনেক রক্তক্ষরণ, পাকস্থলী থেকে অথবা প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ।
- নেফ্রাইটিস।
- ব্যথানাশক ওষুধ সেবন।
- কিডনি ও মূত্রনালিতে পাথর।
- প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া।
কিডনি রোগের লক্ষণ
- শরীরে পানি জমা। এ কারণে প্রথমে মুখ ফোলা।
- প্রস্রাব কম হওয়া।
- প্রস্রাব বেশি হওয়া, বিশেষ করে রাতে।
- প্রস্রাব লাল হওয়া, দুর্গন্ধ হওয়া।
ক্ষুধামান্দ্য ও বমি হওয়া।
- রক্তশূন্যতা।
- চর্মরোগ ছাড়া শরীর চুলকানো।
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা।
- কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।
- হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেওয়া।
কিডনি ভালো রাখতে যা করবেন
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনির শক্র। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধের সঙ্গে প্রয়োজনে ইনসুলিন নিতে হবে এবং এইচবিএওয়ানসি-৭-এর নিচে রাখতে হবে।
- ব্লাড প্রেশারের জন্য এক বা একাধিক ওষুধ সেবনের সময় বিপি ১৩০/৮০-এর নিচে রাখতে হবে।
- ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিশূন্যতা ও রক্তক্ষরণের সঠিক চিকিৎসা করতে হবে।
- কিডনি সংক্রমণ রোগের যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।
- প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হলে এবং কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসা নিতে হবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- ধূমপান বাদ দিতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথার ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।
- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করতে হবে।
- যাঁদের বয়স ৪০, তাঁদের বছরে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। কিডনি টেস্ট, যেমন এস, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, প্রস্রাবের আর/ই এবং এসিআর টেস্ট করাতে হবে।
কিডনি ভালো রাখতে খাওয়াদাওয়া
- প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
- কোমল পানীয় পান করা বাদ দিতে হবে।
- লবণ কম খেতে হবে।
- প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিতে হবে।
- চর্বিযুক্ত মাছ, সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য মাছ পরিমিত খেতে হবে। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে হবে।
- মাংস খেতে হবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে এবং লাল মাংস যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।
জেনে নিন
- কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
- কিডনির ৫০ শতাংশ ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত সেরাম ক্রিয়েটিনিন বাড়ে না।
- কিডনির ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত শারীরিক কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
- দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ যখন ধরা পড়ে, তারপর সেরাম ক্রিয়েটিনিন কমার সুযোগ থাকে না। যথাযথ চিকিৎসায় কিডনির ক্ষতির হার কমানো গেলেও তা স্বাভাবিক করা যাবে না।
পরামর্শ দিয়েছেন: মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন