হোম > স্বাস্থ্য

দেশে বছরে প্রায় ৫ হাজার রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নানাবিধ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকতে দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ টিকা নিয়ে থাকেন। যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে হেপাটাইটিস ভাইরাস-সংক্রান্ত রোগব্যাধি ও লিভারে অতিরিক্ত চর্বিজনিত প্রদাহ থেকে লিভার টিস্যুর পরিবর্তন শুরু হয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লিভার টিস্যুর পরিবর্তন হয়ে সিরোটিক লিভার টিস্যু তৈরি হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। 

তবে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের সুব্যবস্থা না থাকায় এসব রোগীর বড় অংশ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যান। যা একই সঙ্গে ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। ফলে দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সফল লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। 

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে ১ জানুয়ারি ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়। ১২ ঘণ্টাব্যাপী লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনে সহযোগিতা করেছে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও অ্যানেসথেসিয়া টিম। 

উপাচার্য বলেন, দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে এই চিকিৎসা সুবিধা পায়, এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন অপারেশনটি ছিল একটি লিভিং ডোনার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন; এর অর্থ হলো রোগীর আত্মীয়-সম্পর্কিত দাতা থেকে লিভারের একটি অংশ কেটে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। 

উপাচার্য আরও বলেন, লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনে রোগী ছিলেন বগুড়ার মো. মন্তেজার রহমান (৫৩) । তিনি নন-বি, নন-সি জনিত ‘এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজে’ আক্রান্ত ছিলেন। মো. মন্তেজার রহমানকে লিভার দান করেন তাঁর বোন মোসা. শামীমা আক্তার (৪৩)। শামীমার শরীর থেকে সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ কেটে তার ভাইয়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে মন্তেজার রহমানের সিরোটিক লিভারের পুরোটাই কেটে বের করে ফেলা হয়। 

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর আনুমানিক ৮০ লাখ রোগী লিভার-সংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে অন্যতম ‘এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ’ যা হলো ক্রনিক প্রদাহজনিত লিভারের শেষ অবস্থা, যেখানে লিভার তার কার্যক্ষমতা হারায়। সাধারণত হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস সংক্রমণ অথবা লিভারে অতিরিক্ত চর্বিজনিত প্রদাহ থেকে লিভার টিস্যুর পরিবর্তন শুরু হয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লিভার টিস্যুর পরিবর্তন হয়ে সিরোটিক লিভার টিস্যু তৈরি হয়। সিরামিক লিভার টিস্যু স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে অক্ষম। যখন রোগীর লিভারের একটি বড় অংশ সিরোটিক হয়ে যায়, তখন এটাকে লিভার সিরোসিস বলা হয়। 

এই লিভার সিরোসিসের শেষ পর্যায় হচ্ছে ‘এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ’। যার একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। এ ছাড়া লিভারের আরও কিছু রোগ রয়েছে; যেমন লিভারের কোনো একটি অংশে ক্যানসার (হেপাটোসেলুলার ক্যানসার), বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লিভারের জন্মগত ত্রুটির (বিলিয়ারি এট্রেশিয়া, মেটাবোলিক ডিজিজ ইত্যাদি) চিকিৎসাও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। 

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লিভার প্রতিস্থাপন একটি জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। বিএসএমএমইউতে একজন রোগীর লিভার প্রতিস্থাপনে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

প্রতিস্থাপনের পর একজন রোগী প্রায় পাঁচ বছর বেঁচে থাকেন। তবে একজন রোগীর ৪০ বছর বেঁচে থাকার ইতিহাস রয়েছে। এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রতিস্থাপন। ইতিপূর্বে আরও একটি প্রতিস্থাপন করা হলেও সেটি সফল হয়নি। প্রতিস্থাপনের পর একজন রোগীকে এক বছর ফলোআপে থাকতে হয়। এমনকি এই সময়ে সুস্থ হয়ে উঠতে রোগীকে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টাকার ওষুধ সেবন করতে হয়।’ 

প্রতিস্থাপনের প্রধান চিকিৎসক হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চিকিৎসক মো. মোহছেন চৌধুরী বলেন, ‘লিভার প্রতিস্থাপন একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি কর্মকাণ্ড। প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ১৫ দিনের প্রস্তুতি নিতে হয়, অস্ত্রোপচারে সময় লাগে প্রায় ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা। প্রতি ১০০ দাতার মধ্যে মাত্র ৮ থেকে ১০ জনের লিভার গ্রহণ করা যায়।’ 

এ সময়ে লিভার প্রতিস্থাপন করা সেবাগ্রহীতা ও দাতা দুজনেই হাসপাতাল শয্যা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সুস্থ আছেন বলে জানান এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদারসহ এই ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমে নিযুক্ত বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্যথার ওষুধের বিকল্প ভাবা হয় লবঙ্গকে

গর্ভাবস্থায় মেথি খাওয়া যায়

কাঁধ নাড়াচাড়া করতে না পারলে

শীতকালে পানিশূন্যতায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং প্রতিকার

চোখের সমস্যা থেকে মাথাব্যথা হতে পারে

নিয়মিত চা পানকারীরা কেন দীর্ঘায়ু হন, জানালেন বিজ্ঞানীরা

এইচএমপিভিতে মহামারির আশঙ্কা কম, অভিমত বিএসএমএমইউর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের

দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত একমাত্র রোগীর মৃত্যু

এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা

দেশে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত, আক্রান্ত একজন নারী

সেকশন