বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
‘আমার প্রথম সন্তান মেয়ে। তাই একটি ছেলের জন্য আবারও সন্তান নিই। মেয়েটি প্রায়ই অসুস্থ থাকে। তার ১৮ মাস বয়সের সময় জানতে পারি, মেয়েটি থ্যালাসেমিয়া নামের এক জটিল রোগে আক্রান্ত। এরই মাঝে ছেলেসন্তানও জন্ম নিয়েছে। সেও একই রোগে আক্রান্ত এবং আরও বেশি অসুস্থ। এই রোগ সম্পর্কে আমরা জানতাম না। জানলে হয়তো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’ চোখে জল নিয়ে এভাবেই নিজের অজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন মাহফুজুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল মিলনায়তনে মাহফুজুর রহমান জানান, প্রতি মাসে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে তাঁর দুই সন্তানকে বড় করা হচ্ছে; যা শুধু ব্যয়বহুলই নয়, কষ্টদায়কও।
দেশে মা-বাবার এমন অজ্ঞতার কারণে প্রতিবছরই বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া রোগী। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ১২-১৫ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। অর্থাৎ দেশে এর বাহক প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। একজন রোগীর চিকিৎসায় প্রতি মাসে ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এই ব্যয় অনেকের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হয় না।
এমন পরিস্থিতিতে আজ ৮ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘জীবনের ক্ষমতায়নে অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসায় সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা’। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. উম্মে নুসরাত আরা বলেন, এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা, স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগে আক্রান্ত শিশুরা নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগে। বিশেষ করে, মাথা বড় হয়ে যাওয়া, নাক থেবড়ে যাওয়া, দাঁত মুখগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘মানুষ সচেতন হলে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য বিয়ের আগে তরুণদের রক্ত পরীক্ষা করে বাহক কি না, সেটা জানা জরুরি। বাবা-মা দুজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে শিশুরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন আর ওষুধই একজন রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু এটা খুব ব্যয়বহুল। আমাদের কাছে আসা ৮০ শতাংশ রোগীর পক্ষেই এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না।’ তিনি জানান, হাসপাতালে অনেক রোগীর বিনা মূল্যে চিকিৎসা চলে।