১৯২১ সালে আবিষ্কৃত ইনসুলিন ইনজেকশনই আজ পর্যন্ত ডায়াবেটিসের সবচেয়ে কার্যকর, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু দিনে কয়েকবার এই ইনসুলিন সুইয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে এভাবে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী কোনো বেলা ইনসুলিন নিতে ভুলে যায়। সমীক্ষায় দেখা যায়, কিছুদিন ইনসুলিন নেওয়ার পর রোগী ইনসুলিন নিতে চায় না এবং বন্ধ করে দেয়। নিজে বা অন্য কোনো চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়ার ওষুধে চলে যায়। ফলে শর্করা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।
বর্তমানে সুচের মাধ্যমে দিনে দুই থেকে চারবার, একবারে সমস্ত ডোজ ইনসুলিন প্রয়োগ হয়। তাতে দেখা যায়, রক্তে শর্করার তারতম্য হয়। কারণ সমস্ত মাত্রা একবারেই দেওয়া হয় এবং চামড়ার শোষণ প্রক্রিয়া সব সময় এক হয় না। শর্করা তারতম্যের কারণে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা তৈরি করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন প্রয়োগ হলো ইনসুলিনের অভাব পূরণ করা।
আমার অগ্ন্যাশয় প্রতিদিন যেভাবে ইনসুলিন নিঃসারণ করে, তিন থেকে চার বার সুচের মাধ্যমে প্রয়োগে যথাযথভাবে স্বাভাবিক অগ্ন্যাশয়ের মতো কখনো হয়ে ওঠে না। অগ্ন্যাশয়ের এই স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা মাথায় রেখে আর্টিফিশিয়ালভাবে আধুনিক সিজিএম ও ইনসুলিন পাম্প পদ্ধতি কিছুটা হলেও সফল করতে পেরেছে। তা ছাড়া দিনে কয়েকবার ইনসুলিন দেওয়ার ব্যথা ও যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়ার স্বপ্ন ডায়াবেটিস রোগীদের সুযোগ করে দিয়েছে। এই ইনসুলিন পাম্প চিকিৎসায় রোগীদের ইনসুলিন বন্ধ করার প্রবণতা কমেছে। রোগীদের ভেতরে ইনসুলিন গ্রহণের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
সিজিএম ও ইনসুলিন পাম্প ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করতে সক্ষম হয়েছে। আর সর্বাধুনিক এই চিকিৎসাপদ্ধতি আমাদের দেশেও পাওয়া যায়।
লেখক: অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল