ডা. মোহাম্মদ আলী
দেশে বাড়ছে অফিস-আদালতের সংখ্যা। আমাদের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ এখন চাকরি করে। তাঁদের কেউ কেউ সপ্তাহে ছয় দিন এমনকি সাত দিনও অফিস করেন। অনেকে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাটিয়ে দেন অফিসে। বাংলাদেশের ব্যাংকারদের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, যাঁরা বেশি সময় অফিসে বসে কাজ করেন, তাঁদের ঘাড়, কোমর, হাঁটু ও কাঁধে ব্যথা হওয়ার প্রবণতা যাঁরা কম সময় বসে থাকেন, তাঁদের চেয়ে অনেক বেশি। এককথায় একে বলা যায় অফিস সিনড্রোম।
মানুষ জন্মগতভাবে নড়াচড়াপ্রবণ জীব। মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই আহার সংগ্রহে শারীরিক শ্রম দিত। কিন্তু আমাদের আধুনিক জীবন অনেকটাই মেধানির্ভর এবং চেয়ার-টেবিল বা কম্পিউটার-মোবাইলে বন্দী। ফলে হাড় ও মাংসপেশিতে আসে জড়তা। সূর্যের আলোতে কম আসায় শরীরে দেখা দেয় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। সব মিলিয়ে স্থবির থাকতে থাকতে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাংসপেশি ও হাড়ের জড়তা প্রকাশ পায় ব্যথার মাধ্যমে। হাড়ের ক্ষয়, মাংসপেশির দুর্বলতার ব্যথা জেঁকে বসে শরীরে।
একসময় ভাবা হতো, যাঁরা ভারী কাজ করেন, অস্বস্তিকর ভঙ্গিমায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন, কেবল তাঁদেরই ঘাড়-কোমরে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আধুনিক কালের গবেষণা বলছে, যাঁরা দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিমায় কাজ করেন, তাঁদেরই ব্যথাজনিত শারীরিক সমস্যা বেশি হয়। অনেকে ভাবেন, খুব আধুনিক চেয়ারে বসে ১২-১৪ ঘণ্টা টানা কাজ করলেও ঘাড় বা কোমরব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়; আসলে একই ভঙ্গিমায় কতক্ষণ কাজ করলেন, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিত্রাণের উপায়
» প্রথম শর্ত হলো একভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। প্রতি এক ঘণ্টায় এক মিনিটের জন্য হলেও পজিশন পরিবর্তন করতে হবে।
» সুযোগ থাকলে হালকা স্ট্রেচিং করা
যেতে পারে।
» খুব সাধারণ অথচ বিশেষ কিছু ব্যায়াম আছে, যা অফিসের চেয়ারে বসেই করা যায়, সেগুলো জানতে হবে।
» যাঁরা এরই মধ্যে ব্যথায় আক্রান্ত, তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
» মোবিলিটি বা নড়াচড়া বাড়াতে হবে। একটি স্লোগান মনে রাখা দরকার, ‘সুস্থ থাকতে হাঁটতে হবে’।
» অফিস থেকে বাসায় ফিরতে রিকশা ব্যবহার বন্ধ করুন। এভাবে সময় ও সুযোগ পেলেই হাঁটতে থাকুন।
» প্রায়ই বেরিয়ে পড়ুন অ্যাডভেঞ্চারে। আশপাশ দেখার জায়গাগুলো ঘুরেফিরে দেখুন। সাঁতার কাটুন, দৌড়ান বা হিল ট্রেকিং করুন। এতে শারীরিক শ্রমের সঙ্গে পাবেন সূর্যের ভিটামিন ডি।