বয়ঃসন্ধিকাল বা পিউবার্টি আসলে একটা সময়কাল। এই সময় পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে একজন কিশোর বা কিশোরীর মধ্যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। পরিবর্তনের এই সময়কাল ৯ থেকে ১৪ বছর।
বয়ঃসন্ধিকালের এ সময়ে ত্বকে ব্রণের প্রাদুর্ভাব, অতিরিক্ত তৈলাক্ত চুল বা ত্বক, ঘামের দুর্গন্ধ, গলার স্বর পরিবর্তন, উচ্চতা, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদিসহ নানা পরিবর্তন হয়ে থাকে।
অভিভাবকের করণীয়
মা-বাবাকে খেয়াল করতে হবে, আপনার সন্তানটি হয়তো হঠাৎই অনেক বেশি আবেগপ্রবণ, স্বাধীনচেতা বা অযৌক্তিক আচরণ করবে এ সময়। পরিবর্তনের এই সময়কালে অনেক কিশোর-কিশোরী উদভ্রান্ত বোধ করে। এ সময়টায় অভিভাবককে পাশে থাকতে হবে। সন্তানের এই স্বাভাবিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করতে হবে। পরিবারের সন্তানটি যখন বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ করে, তখন মা-বাবাকে সেই আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে হবে, যাতে সন্তান তার শারীরিক ও মানসিক ক্রান্তির কথাগুলো তাঁদের অনায়াসে বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাবা তাঁর ছেলেসন্তানকে ও মা তার কন্যাসন্তানকে সহজভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো। এই পরিবর্তনগুলো যে খুবই স্বাভাবিক, প্রয়োজনীয় ও সমসাময়িক বয়সের সবার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রকাশিত হয়, সে তথ্যগুলো পৌঁছাতে হবে সন্তানের কাছে।
যেভাবে সহযোগিতা করতে পারেন
- প্রাণভরে সন্তানের ভালো কাজে উৎসাহ দিন। তার অর্জন ও সদাচরণের প্রশংসা করুন।
- যদি সে কোনো ভুল করে অথবা অযৌক্তিকভাবে আবেগপ্রবণ বা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে, তবে শুরুতেই তাকে বকাঝকা করবেন না। উত্তেজিত না হয়ে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে তার সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করুন।
- পারিবারিকভাবে অভিভাবকদেরও সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। এতে আপনার বেড়ে উঠতে থাকা সন্তানটিও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের নির্দেশনা পেয়ে যাবে।
- আপনার সন্তানের সব কাজে আগ্রহ প্রকাশ করুন ও খোঁজখবর রাখুন। হতে পারে তা পড়াশোনা, খেলাধুলা বা যেকোনো শখের বিষয়। তাকে অনুভব করতে দিন, আপনি তাকে ভালোবাসেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে তার পাশে আছেন।
- তার বন্ধু বা সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচিত হোন। প্রয়োজনে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গেও পরিচিত হোন।
- যদি আপনার সন্তানের মধ্যে অস্বাভাবিক শারীরিক বা মানসিক কোনো পরিবর্তন দেখা যায় অথবা সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো সময়কালের আগে বা দেরিতে পরিলক্ষিত হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- শারীরিক, মানসিক ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুর মতো সহজভাবে কথা বলুন। আপনার সন্তানকে আত্মস্থ করতে শেখান যে এই পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক। এতে লজ্জিত হওয়ার ও অপরাধবোধে ভোগার কিছু নেই। সহজবোধ্য ভাষায় তাকে এই পরিবর্তনগুলো বুঝিয়ে দিতে হবে।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত ঘুম, খেলাধুলা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনপ্রণালির শিক্ষা এই সময় আপনার সন্তানকে ভবিষ্যতের একজন আদর্শ, সক্ষম ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা