Ajker Patrika
হোম > স্বাস্থ্য

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসের সতর্কতা

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসের সতর্কতা

গর্ভকাল প্রত্যেক নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। ৪০ সপ্তাহের গর্ভকালকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম তিন মাস প্রথম ত্রৈমাসিক বা ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার। এ সময় গর্ভবতীর শরীরে নানা রকম পরিবর্তনের সূচনা হয়। এসব পরিবর্তনের কারণে বমি বমি ভাব, ক্লান্তিবোধ, স্তনে ব্যথা ও ভারী লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং অরুচি হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে এ সময় বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জরুরি।

ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার 
(০ থেকে ১৩ সপ্তাহ)
গর্ভস্থ শিশুর সঠিক ও পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রথম তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে শিশুর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন এবং বিকাশ ঘটে। বেশির ভাগ গর্ভপাত ও জন্মগত ত্রুটি এই সময়ের মধ্যে ঘটে। তাই এ সময়ে কিছু ব্যাপারে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি।

খাবার 
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে সাধারণত অতিরিক্ত খাবার তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি।

  • দুধ ও দুধ দিয়ে তৈরি খাবার, যেমন দই, মাখন, পনির ইত্যাদি।
  • ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার ও গাঢ় সবুজ শাকসবজি, যেমন পালংশাক, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, ঢ্যাঁড়স, রঙিন সবজি ইত্যাদি।
  • শস্যদানা, যেমন পাস্তা, বার্লি, লাল চাল, ওটস ইত্যাদি।
  • ডিম, মাছ, মাংস, বিভিন্ন বীজ, বাদাম ইত্যাদি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেলস ও ভিটামিন রয়েছে, যা গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সহায়ক। 

কী কী খাবেন না
যেকোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার, সামুদ্রিক খাবার, জাংকফুড, পেঁপে, আনারস, কামরাঙ্গা, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, অর্ধসেদ্ধ মাংস, অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার।

ব্যায়াম 
গর্ভের প্রথম তিন মাস চিকিৎসকের পরামর্শে হালকা ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী। তবে এ সময় খুব বেশি ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। 

ক্যাফেইন 
ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করতে পারে। ফলে ঘুম কম হওয়া, বিরক্তি ও স্নায়বিক দুর্বলতা হতে পারে। এতে গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়তে পারে। তাই ক্যাফেইন গ্রহণ, অর্থাৎ চা বা কফি পান সীমিত করা উচিত। 

ঘুম 
এ সময় মায়েদের দিনে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম এবং রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা পরিপূর্ণ ঘুম প্রয়োজন। শিশুর বিকাশের জন্য এটি খুব দরকারি।

মানসিক চাপ মোকাবিলা
হরমোনের পরিবর্তন ও তারতম্যের কারণে অনেক মা গর্ভকালীন মানসিক চাপ বা স্ট্রেস অনুভব করতে পারেন। প্রতিদিন ধ্যান, প্রার্থনা ও মেডিটেশন এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। প্রতিদিন কিছুটা সময় বই পড়া, গান শোনা, হাঁটাহাঁটি মানসিক চাপ অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া স্বামী এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটালে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়। 

অন্যান্য সাবধানতা
গর্ভের প্রথম তিন মাস ভ্রূণ 
গঠনের মূল সময়। তাই এ সময় 
বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন 
করা উচিত। যেমন: 

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ না খাওয়া।
  • মাদক বা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা। 
  • বাথরুম যেন পিচ্ছিল বা ভেজা না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা। 
  • টাইটফিট পোশাক না পরে ঢিলেঢালা আরামদায়ক সুতি কাপড় পরা এবং ফ্ল্যাট স্যান্ডেল ব্যবহার করা।
  • গর্ভবতীর ঘর যেন খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের উপযোগী হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। 

সুস্থ সন্তান মানেই সুস্থ প্রজন্ম। সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশু জন্মদানের জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে, গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও পরিচর্যা নিশ্চিত করা।

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি,সহকারী অধ্যাপক (গাইনি),চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

৪১ জেলায় সিভিল সার্জন নিয়োগ

২০৫০ সাল নাগাদ স্থূলতায় ভুগবে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক

অপুষ্টিতে ভোগা কিশোরীদের সিংহভাগই দক্ষিণ এশিয়ার: গবেষণা

১০–২৯ বছর বয়সী নারীদের আত্মহত্যার হার বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ

দেশে জিকা ভাইরাসের প্রথম ‘ক্লাস্টার’ শনাক্ত

২০১৩ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের দাবি

২৯ সিভিল সার্জনকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন

দেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের ‘ক্লাস্টার’ শনাক্ত, আক্রান্ত ৫

স্বাস্থ্যকর হলেও নিয়ম মেনে খেতে হবে এসব খাবার

রোজায় সঠিক পুষ্টি