হোম > স্বাস্থ্য

ইফতারে ভাজাপোড়া কতটা ক্ষতিকর

আলমগীর আলম

ছবি: আজকের পত্রিকা

আমরা রোজা রেখে ভাজাপোড়া খাওয়ার যে রেওয়াজ করে ফেলেছি, তা কবে কীভাবে চালু হয়েছে, ঠিক জানা নেই। আমাদের দেশীয় খাবারের যে ঘরানা আছে, সেটা কিন্তু এমন নয়। সম্ভবত পাকিস্তানের খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে এর কিছুটা মিল আছে। কিন্তু কখনোই আমাদের গ্রামবাংলায় ভাজাপোড়া খাওয়ার এমন প্রচলন ছিল না। হালে পুরো দেশে রোজায় এখন ভাজাপোড়া খাওয়ার ঝোঁক বেশি। এসব ভাজাপোড়া খাওয়ার দোকানগুলোতে এখন বসে ‘ইফতারির বাজার’।

এই ভাজাপোড়া খাবারকে ইফতারি বলে যে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে, তাতে আমাদের স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রোজা যে সংযমের বিষয়, সেটা আর এখন আমাদের সামনে নেই। রোজা মানেই হচ্ছে বাহারি খাবারের মাস। কেনাকাটার মাস।

ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বেশ কয়েকটি কারণে ক্ষতিকর হতে পারে। রোজায় দিনভর উপবাসের পর শরীর পুষ্টিকর ও সহজে হজম হয় এমন খাবার চায়। কিন্তু তেলে ভাজা ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণে ক্ষতি

  • রোজায় দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পর শরীরে সহজপাচ্য ও পানিযুক্ত খাবারের চাহিদা থাকে। পেঁয়াজু, বেগুনি, সমুচার মতো ভাজাপোড়া অন্যান্য খাবার অনেক সময় বেশি তেল শোষণ করে, যা পাকস্থলীর ওপর চাপ ফেলে এবং গ্যাস-অম্বল বাড়িয়ে দেয়।
  • ভাজাপোড়া খাবার ক্যালরি-সমৃদ্ধ এবং এতে ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকতে পারে, যা নিয়মিত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
  • ইফতারে বেশি তেল-মসলা ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (যেমন ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার) খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং কিছু সময় পরই তা কমে যায়। এই অবস্থা ক্লান্তি ও দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • বেশি তেলযুক্ত খাবার ধমনিতে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
  • ভাজাপোড়া খাবার দেহে পানিশূন্যতা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে রোজার দিন শেষে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এটি আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো। এটি হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, ওজন বাড়াতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত।

জিলাপিও স্বাস্থ্যকর নয়

ভাজাপোড়ার বাইরে আমরা ইফতারে আরেকটি খাবার খাই, তা হলো জিলাপি। পুরো বছর খাওয়া না হলেও ইফতারে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি। অথচ একটা ১০০ গ্রাম আকারের জিলাপি খেলে ডায়াবেটিসের রোগীদের ৭ পয়েন্ট সুগার বেড়ে যায়। ফলে ইফতারে জিলাপি খুব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নয়। জিলাপি মূলত পরিশোধিত চিনি বা রিফাইন্ড সুগার, ময়দা এবং ডুবো তেলে ভাজার মাধ্যমে তৈরি হয়। এ ধরনের খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

জিলাপির ক্ষতিকর দিক

জিলাপিতে অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে এবং কমে। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দ্রুত ক্ষুধা লাগে, যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়।

  • এটি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। ১০০ গ্রাম জিলাপিতে ৩০০ থেকে ৪০০ ক্যালরি থাকে। এই পরিমাণ ক্যালরি শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণ।
  • জিলাপি ভাজতে সাধারণত ডালডা বা আগে ব্যবহৃত তেল পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের তেল ট্রান্সফ্যাট তৈরি করে। এই ফ্যাট কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • জিলাপি তৈরিতে ব্যবহৃত রিফাইন্ড ফ্লাওয়ার বা ময়দা ও চিনি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি পাকস্থলীতে গ্যাস, অম্বল ও অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করে।
  • অতিরিক্ত চিনি শরীরে পানিশূন্যতা বাড়ায় এবং এটি রোজার পর শরীরের জন্য আরও ক্ষতিকর।
  • এবার ভেবে দেখুন, রোজা রেখে অসুস্থ হওয়ার জন্য ভুল খাবারগুলোই খাবেন কি না। অথচ রোজা রেখে সুস্থতা ফিরে পাওয়ার কথা।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

শিশু-কিশোরদের যে ধরনের পানীয় না দেওয়া ভালো

কিডনি রোগী রোজায় কী খাবেন

আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোজা রাখতে পারবেন কি না

রমজানে শিশুর খাবার ও ঘুম

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা যেভাবে বাড়াবেন

বিএফডিএস বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন

হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ১০ খাবার

আলোক হেলথকেয়ারের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

ক্রনিক কিডনি ডিজিজে (সিকেডি) আক্রান্ত রোগীদের রোজা রাখা

বিশেষ বিসিএসে চিকিৎসক নিয়োগে বয়সসীমা ৩৪ করার প্রস্তাব