আমরা রোজা রেখে ভাজাপোড়া খাওয়ার যে রেওয়াজ করে ফেলেছি, তা কবে কীভাবে চালু হয়েছে, ঠিক জানা নেই। আমাদের দেশীয় খাবারের যে ঘরানা আছে, সেটা কিন্তু এমন নয়। সম্ভবত পাকিস্তানের খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে এর কিছুটা মিল আছে। কিন্তু কখনোই আমাদের গ্রামবাংলায় ভাজাপোড়া খাওয়ার এমন প্রচলন ছিল না। হালে পুরো দেশে রোজায় এখন ভাজাপোড়া খাওয়ার ঝোঁক বেশি। এসব ভাজাপোড়া খাওয়ার দোকানগুলোতে এখন বসে ‘ইফতারির বাজার’।
এই ভাজাপোড়া খাবারকে ইফতারি বলে যে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে, তাতে আমাদের স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রোজা যে সংযমের বিষয়, সেটা আর এখন আমাদের সামনে নেই। রোজা মানেই হচ্ছে বাহারি খাবারের মাস। কেনাকাটার মাস।
ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বেশ কয়েকটি কারণে ক্ষতিকর হতে পারে। রোজায় দিনভর উপবাসের পর শরীর পুষ্টিকর ও সহজে হজম হয় এমন খাবার চায়। কিন্তু তেলে ভাজা ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণে ক্ষতি
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো। এটি হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, ওজন বাড়াতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত।
জিলাপিও স্বাস্থ্যকর নয়
ভাজাপোড়ার বাইরে আমরা ইফতারে আরেকটি খাবার খাই, তা হলো জিলাপি। পুরো বছর খাওয়া না হলেও ইফতারে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি। অথচ একটা ১০০ গ্রাম আকারের জিলাপি খেলে ডায়াবেটিসের রোগীদের ৭ পয়েন্ট সুগার বেড়ে যায়। ফলে ইফতারে জিলাপি খুব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নয়। জিলাপি মূলত পরিশোধিত চিনি বা রিফাইন্ড সুগার, ময়দা এবং ডুবো তেলে ভাজার মাধ্যমে তৈরি হয়। এ ধরনের খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
জিলাপির ক্ষতিকর দিক
জিলাপিতে অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে এবং কমে। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দ্রুত ক্ষুধা লাগে, যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র