মায়ের বুকের দুধ শিশুর জীবনে শ্রেষ্ঠ সূচনা। শিশুর আয়ু, পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশ—সব মঙ্গল নিহিত আছে এতে। বলা হয়ে থাকে, জন্মের পর শালদুধ শিশুর প্রথম টিকা। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাচ্চা যার, দুধ তার হতে হবে। আপনি যদি মানবশিশুকে জন্মের পর গরু-ছাগলের শালদুধ খাওয়ান, তাহলে সেটা কাজে আসবে না। মানবশিশুর হাড়, দাঁত, মস্তিষ্কসহ শরীরের প্রতিটি অংশের গঠনে যে উপাদান যতটুকু দরকার, মায়ের দুধে ঠিক ততটুকুই আছে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধে যা থাকে—
মায়ের দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। এটি শিশুর জন্য খুব দরকারি। এতে উন্নতমানের কার্বোহাইড্রেট অলিগোস্যাকারাইড পাওয়া যায়, যা গরুর দুধে পাওয়া যায় না। গরুর দুধে আয়রন ও ফাইবারের পরিমাণ খুবই কম থাকে, যা মায়ের দুধে অনেক বেশি থাকে। অন্যদিকে গরুর দুধে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই প্রোটিন বাছুরের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। কিন্তু এই উচ্চ প্রোটিন মানব শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয়। এ ছাড়া মায়ের বুকের দুধে চর্বি পরিপাককারী লাইপেজ এনজাইম থাকে। এটি অন্য কোনো দুধে থাকে না। মায়ের দুধ যেহেতু সরাসরি পান করা হয়, তাই প্রতিটি এনজাইমের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকে।
অন্যদিকে গরুর দুধে কিছু প্রয়োজনীয় এনজাইম থাকলেও তা বারবার ফুটানোর কারণে অনেকটাই অকেজো হয়ে যেতে পারে। মানুষের শিশুর জন্য মানুষের দুধ আর গরু-ছাগলের বাচ্চার জন্য তাদের দুধই দরকার। একজনের দুধ অন্যজনের জন্য প্রযোজ্য নয়। জন্মের পর আধা ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা উচিত। শুরুতেই হয়তো শিশু বুকের দুধ পাবে না। তাই বলে খাওয়ানো বন্ধ রাখা যাবে না। শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস; অর্থাৎ ১৮০ দিন বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এই ছয় মাস মায়ের দুধেই শিশুর শরীর ও মস্তিষ্ক গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান পাবে।
মায়ের দুধে শিশুর উপকারিতা
বুকের দুধ খাওয়ানোয় মায়ের উপকারিতা
বিকল্প দুধ খাওয়ালে যা হতে পারে
বিকল্প দুধ মায়ের দুধের চেয়ে কিছুটা মিষ্টি স্বাদের। ফলে শিশু মায়ের দুধ খেতে চায় না এবং ধীরে ধীরে মায়ের দুধ খাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে বুকের দুধ ক্রমে শুকিয়ে যায়। তাই একান্ত বাধ্য না হলে শিশুকে মায়ের দুধের বিকল্প কোনো দুধ না খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো।
মো. ইকবাল হোসেন: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল