চীন-জাপানে পুরোনো একটি ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে শুরু হয়েছে। করোনার মতো এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস) নামের এ ভাইরাসও মানুষের শ্বসনতন্ত্রে আক্রমণ করছে। বিশেষজ্ঞরা এ ভাইরাসের সংক্রমণে মহামারির আশঙ্কা করলেও চীন বলছে, এটি বড় কোনো হুমকি নয়। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিজিটিএনের খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এ ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, যাঁরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের শারীরিক সমস্যা অনেকটা ফ্লুর মতো। এর উপসর্গও ফ্লুর মতো। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এটা নিশ্চিত করেছেন, এ ভাইরাসে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে শ্বসনতন্ত্রে। তবে এটি প্রাণঘাতী, এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
সিজিটিএনের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের এপ্রিলে এ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের গবেষক ঝেং লিশু বলেন, এইচএমপিভি বড় কোনো হুমকি নয়। এটা ৬০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ২০০১ সালে এসে এটি বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। এর সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায় না এবং কোনো বিশেষ উপসর্গও নেই।
চীনের উহান শহর থেকে ২০২০ সালে ছড়িয়ে ছিল করোনাভাইরাস। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। করোনাও আক্রমণ করত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে। এইচএমপিভির ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, এ ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চীনের হাসপাতালগুলোয় ভিড় বাড়ছে। এটা নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একধরনের শোরগোল পড়েছে। এ কারণে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ভারত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এইচএমপিভির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পর্যবেক্ষণ চালু করেছে চীন। এবার চীন যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেটি পাঁচ বছর আগে করোনার মহামারির সময় ছিল না। তবে ঠিক কতজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান সিডিসির বরাতে এ ভাইরাসের ধরন সম্পর্কে খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। এতে বলা হয়, ২০০১ সালে এ ভাইরাস সম্পর্কে সিডিসি বলেছিল, এটি শ্বাসতন্ত্রের ওপর ও নিচের অংশকে সংক্রমিত করে। শিশু, প্রবীণসহ সবাই এ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। যাঁদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল, তাঁদের এ ভাইরাসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
করোনার মতো এ ভাইরাসেও জ্বর, কাশি হতে পারে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে এইচএমপিভিতে সংক্রমিত হলে। এ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি, কাশি, হাত মোলাকাত ও স্পর্শের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়া করোনার মতো এ ভাইরাস নাক, চোখ ও মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। করোনার মতো নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, আক্রান্ত বা উপসর্গ রয়েছে—এমন ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।