শিশুদের কানে ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সাধারণত ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে কানের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। তিন বছরের কম বয়সী শতকরা ৩০ ভাগ শিশু কোনো না কোনো কারণে কানে ব্যথায় ভুগে থাকে।
ঝুঁকিতে যারা
- সিগারেটের ধোঁয়া বা বায়ুদূষণের শিকার শিশু
- যাদের ফিডার বা বোতলে দুধ খাওয়ানো হয়
- যেসব শিশু ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বাস করে
- যাদের অ্যালার্জির কারণে বারবার সর্দি-কাশি হয়
- যেসব শিশুর জন্মগত তালুকাটা সমস্যা আছে
কারণ
ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি থেকে নাক ও কানের সংযোগ টিউব ব্লক হয়ে কানের পর্দার ভেতরের দিকে তরল পদার্থ জমে পর্দা ফুলে ওঠা।
- কানের ভেতর এক্সটারনাল ইয়ার ক্যানেলে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- কানের পর্দার বাইরে এয়ার ক্যানেলে সংক্রমণ হওয়া।
- কানের ভেতরে ফোড়া বা লোমের গোড়ায় সংক্রমণ হওয়া।
- কানের ভেতরে বহিঃকর্ণ বা পর্দায় কাঠি কিংবা কটনবাডের আঘাত লাগা।
কীভাবে বুঝবেন
কানে ব্যথা হলে শিশু চিৎকার করে কাঁদবে, শরীরের তাপমাত্রা ও অস্থিরতা বাড়বে।
- শিশু নিজে নিজের কান ধরে টানাটানি করবে।
- খাবারের রুচি কমে যেতে পারে।
- রাতে ব্যথার জন্য ঘুম হবে না, কান্নাকাটি করবে।
- কাশি হবে এবং নাক দিয়ে পানি ঝরতে পারে।
- যারা হাঁটতে পারে, কানে ব্যথার জন্য তাদের চলাচলে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
চিকিৎসা
কানে ব্যথায় শিশু অস্থির হলে, ঘাড় শক্ত হলে, ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- জ্বর ও ব্যথার জন্য বেদনানাশক ওষুধে চিকিৎসা করাতে হবে।
- সংক্রমণ থাকলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।
- কানের ভেতর শুকনো রাখতে হবে এবং কানে পানি যেন না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
- চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তা পুরো মেয়াদে খাওয়াতে হবে।
- ব্যথাসহ কান দিয়ে পুঁজ বা রক্তমিশ্রিত পানি পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে কানের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে।
- ওয়াক্স বা ময়লা থাকলে অলিভ অয়েল দিয়ে ময়লা নরম করে নাক কান গলার চিকিৎসক দিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে।
- অনেক সময় নাক কান গলার চিকিৎসকেরা নাকের ড্রপ দিয়ে থাকেন কানে ব্যথার চিকিৎসায়। সে ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত না হয়ে এর কারণ জেনে নিতে হবে।
- দাঁতের কোনো সমস্যার জন্য কানে ব্যথা হলে দন্ত বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।
যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে যে জটিলতা হবে
- সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাবে।
- কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- শিশু কানে শুনবে না।
- কানের পেছনে মাথার হাড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে ম্যাস্টোডাইটিস হতে পারে।
- মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের পর্দায় সংক্রমণ হতে পারে।
- শিশুর বাক্শক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কানে ঘন ঘন বিশ্রী গন্ধযুক্ত পুঁজ হতে পারে। এ থেকে মুখমণ্ডলের পক্ষাঘাত হয়ে মুখ বেঁকে যেতে পারে।
প্রতিরোধে যা করতে হবে
কানের সংক্রমণ হওয়ার একটি কারণ হলো ঘন ঘন কান খোঁচানো। ক্লিপ, পেনসিল বা সেফটি পিন দিয়ে কান কোনোভাবেই খোঁচানো যাবে না।
- পাতলা কাপড় দিয়ে কানের বাইরে দিকের ময়লা পরিষ্কার করে দিতে হবে। কিন্তু ভেতরের ময়লা পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই। তবে বেশি ময়লা জমলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- জন্মের পর প্রথম এক বছর শিশুকে ঠান্ডা লাগা থেকে বিরত রাখতে হবে।
- যেসব শিশু ফিডারে দুধ খায়, তাদের মাথা উঁচু করে দুধ খাওয়াতে হবে।
- শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- শিশুর সামনে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- শিশুকে বুকের দুধ সঠিক নিয়মে বসিয়ে খাওয়াতে হবে।
নাকের পেছনের একধরনের গ্লান্ড বড় হলে নাকের সঙ্গে কানের সংযোগকারী টিউব ব্লক হয়ে কানের সংক্রমণ হতে পারে। এ রকম সমস্যায় মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে বা শিশু হাঁ করে ঘুমালে নাক কান গলার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পরামর্শ
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী), নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন , আবাসিক সার্জন (ইএনটি) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল