নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ফুটপাতে বিক্রি হওয়া চটপটি, আখের রস, অ্যালোভেরার শরবত, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, মিক্সড সালাদসহ অনেক খাবারেই ডায়রিয়ার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে এক গবেষণায়। গতকাল রোববার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) সম্মেলনকক্ষে ওই গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ শীর্ষক সেমিনারে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা এই তথ্য জানান।
সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য, পুষ্টি এবং কৃষি গবেষণা ল্যাবরেটরির দায়িত্বরত মো. লতিফুল বারি। এতে দেখা যায়, ফুটপাতে বিক্রি হওয়া প্রতি প্লেট চটপটিতে গড়ে ৭ কোটি ২০ লাখ ই-কোলাই, ৭৫০ সালমোনেলা ও ৭৫০ ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। ছোলা-মুড়িতে ৭ লাখ ৪০ হাজার ই-কোলাই, ২ হাজার সালমোনেলা ও ৩০ লাখ ও ভিব্রিও পাওয়া গেছে। স্যান্ডউইচে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ২ হাজার, সালমোনেলা ২ হাজার ও ভিব্রিও ১ কোটি ৬০ হাজার। আখের রসে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ৬৫ হাজার, সালমোনেলা ১৭ হাজার ও ভিব্রিও ১৩ হাজার। অ্যালোভেরার শরবতে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার, সালমোনেলা ১৮ লাখ ও ভিব্রিও ১৪ হাজার। মিক্সড সালাদে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ১ হাজার ৮০০, সালমেনোলা ৫১০ ও ভিব্রিও ৩০০।
গবেষণার ফলাফলে আরও দেখা গেছে, রাস্তার এসব খাবার খেয়ে প্রতি ১০ হাজার মানুষে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ায় ২ জন, সালমেনোলা ব্যাকটেরিয়ায় ৪ জন ও ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ায় ১ জন অসুস্থ হচ্ছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭টি অঞ্চলের ফুটপাত থেকে এসব খাবারের ৪৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
দেশের মানুষের শরীরে রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বেশি থাকায় আক্রান্তের পরিমাণ কম হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়।
গবেষণা দলের প্রধান মো. লতিফুল বারি বলেন, দূষিত পানি, নোংরা গামছা, অপরিষ্কার হাত, ধুলাবালুযুক্ত পরিবেশের কারণে এসব জীবাণু খাবারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সম্পর্কে জ্ঞান ও ধারণা কম। এ কারণে এসব খাবার ও জুসে জীবাণু ঢুকে পড়ছে। ফুটপাতের বিভিন্ন খাবার খেয়ে মানুষ ই-কোলাই, সালমেনোলা ও ভিব্রিওর মতো জীবাণুতে সংক্রামিত হচ্ছে। এসব খাবার নিরাপদ করতে বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ ও প্রতিদিন মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সফিকুজ্জামান বলেন, খাবার নিরাপদ রাখতে আন্তর্জাতিক সংস্থা গেইন, ইউএস এআইডি, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ চলছে। দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁর মান ভালো করতে হবে। দেশের সব খাবারকে নিরাপদ করতে হবে। এটি করতে না পারলে এর চেয়ে বড় সমস্যা আর নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফলাফল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ডা. মোহাম্মদ মোস্তফা। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্থা ও ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।