হোম > স্বাস্থ্য

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ: সচেতনতায় প্রতিরোধ করা যায়

ডা. লুবনা খন্দকার

সাধারণত দেহের নানা ভাঁজে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক জন্মায়। মুখ, গলা, পায়ের আঙুল, মলদ্বার, কুঁচকি, পিঠ, বুক ও মাথার ত্বকে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে তীব্র চুলকানির পাশাপাশি কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হয়ে যায়। এটি যেকোনো বয়সী মানুষের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ছত্রাকজনিত এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

কেন হয়
বিভিন্ন কারণে ছত্রাকজনিত রোগ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আবহাওয়া, প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, পরিচ্ছন্ন পোশাক ব্যবহার না করা, ওষুধের ডোজ সম্পন্ন না করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নানা ওষুধ সেবন করা ইত্যাদি। এসব কারণে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ এবং এর প্রদাহ বেড়ে চলেছে।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগের ধরন

ত্বকে যেকোনো ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণকে বলা হয় টিনিয়া বা দাদ। দাদের রয়েছে নানা ধরন। শরীরের স্থানভেদে এর নাম, উপসর্গ ও চিকিৎসাপদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, পায়ের পাতায় সংক্রমণ হলে তাকে বলে টিনিয়া পেডিস বা অ্যাথলেট ফুট। পিঠ, বুক, পেট ও হাতে-পায়ে সংক্রমণ হলে তাকে বলা হয় টিনিয়া করপোরিস বা রিংওয়ার্ম। ছত্রাকজনিত চর্মরোগের ক্ষেত্রে টিনিয়ার এ ধরনটি সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া কুঁচকির দাদকে বলা হয় টিনিয়া ক্রুরিস। নখের দাদকে বলা হয় টিনিয়া আনগুইয়াম। মাথার ত্বকে দাদ হলে বলা হয় টিনিয়া ক্যাপাইটিস।

উপসর্গ

  • দাদ হলে বেশ চুলকানি হয় এবং চুলকালে কষ বের হয়। 
  • আক্রান্ত জায়গার চামড়ার ওপর গোলাকার বা চাকার মতো ক্ষত তৈরি হয়। 
  • ধীরে ধীরে চাকার পরিধি বাড়তে থাকে। 
  • ক্ষতস্থানের চামড়া খুশকির মতো সাদা হয়ে যায়। 
  • আক্রান্ত অংশে পানি বা পুঁজভর্তি দানা দেখা দেয়। 
  • নখে হলে নখ ভঙ্গুর ও অস্বচ্ছ হয়ে যায়। 
  • কুঁচকি বা কোমরে হলে চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়।

সংক্রমণের কারণ

  • ত্বক দীর্ঘ সময় ভেজা থাকা। 
  • বারবার একই মোজা ব্যবহার করা। 
  • আঁটসাঁট জুতা পরা এবং পা ঘেমে যাওয়া। 
  • জুতা ছাড়া খালি পায়ে হাঁটা। 
  • আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় থাকা।
  • অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরা। 
  • ঘামে ভেজা কাপড় না ধুয়ে ব্যবহার করা। 
  • সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিসপত্র ব্যবহার করা।
  • ঘরে রোগাক্রান্ত বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণী থাকা।

চিকিৎসা
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ ছত্রাকজনিত চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। চিকিৎসার মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়। তবে কিছুদিন পরে আবার দেখা দেয়। এর অন্যতম কারণ, কিছুটা সুস্থ হলেই রোগীরা ওষুধ সেবন করা বন্ধ করে দেন। কখনো কখনো ওষুধের ডোজ সম্পন্ন করলেও এই রোগ ফিরে আসতে দেখা যায়। কারণ, ওষুধ সেবন করলেও রোগী আগের ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ভালোভাবে পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করেন। ফলে খুব সহজে কাপড় থেকে ছত্রাক আবার দেহে প্রবেশ করে। ছত্রাক সংক্রমণ মারাত্মক কিছু নয়। তবে কখনো কখনো এর নিরাময় কঠিন হয়ে উঠতে পারে। রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হলে, দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। দেরি হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।

প্রতিরোধ ও সচেতনতা

  • দৈনন্দিন জীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। 
  • সংক্রমিত স্থান বারবার ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। 
  • অন্যের জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • আক্রান্ত জায়গা স্পর্শ করলে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। 
  • খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • ঘেমে গেলে দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। 
  • প্রতিদিন গোসল করতে হবে। 
  • রাস্তার নোংরা পানি গায়ে বা পায়ে লাগলে দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ত্বকের ভাঁজগুলো সর্বদা শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে। 
  • সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে, এমন জুতা পরতে হবে।

ডা. লুবনা খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, আলোক হেলথ কেয়ার লি., মিরপুর-১০, ঢাকা।

ব্যথার ওষুধের বিকল্প ভাবা হয় লবঙ্গকে

গর্ভাবস্থায় মেথি খাওয়া যায়

কাঁধ নাড়াচাড়া করতে না পারলে

শীতকালে পানিশূন্যতায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং প্রতিকার

চোখের সমস্যা থেকে মাথাব্যথা হতে পারে

নিয়মিত চা পানকারীরা কেন দীর্ঘায়ু হন, জানালেন বিজ্ঞানীরা

এইচএমপিভিতে মহামারির আশঙ্কা কম, অভিমত বিএসএমএমইউর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের

দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত একমাত্র রোগীর মৃত্যু

এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা

দেশে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত, আক্রান্ত একজন নারী

সেকশন