মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মুখে থাকা সুদানের সাবেক এক রাজনীতিবিদ কারাগার থেকে পালিয়েছেন। রাজধানী খার্তুমের কোবের কারাগার ভেঙে বন্দী পালানোর খবরের মধ্যে বিবিসিকে তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাও এখন আর কারাগারে নেই।
আহমদ হারুন নামে ওই রাজনীতিবিদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি ছিলেন। এই সপ্তাহের শুরুতে তিনি কারাগার থেকে পালান। সেখানে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির সাজা ভোগ করছিলেন।
সুদানের তৈয়বা টেলিভিশনে হারুনকে উদ্ধৃত করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হারুন ও অন্যান্য বন্দীরা যারা বশিরের অধীনে কাজ করেছিলেন, তাঁরা কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তবে ‘বিচার শুরু হলে তিনি আদালতে হাজির হতে প্রস্তুত’ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
সুদানে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে থাকা দুই জেনারেল তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন। তবে এই প্রতিশ্রুতি শান্তি বয়ে আনতে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিবিসির।
১৫ এপ্রিল থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের প্রধান সাবেক মিলিশিয়া নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতির নেতৃত্বে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে এই লড়াই চলছে।
গণবিক্ষোভের মুখে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন বশির। পরে দুর্নীতির দায়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে, ৭৯ বছর বয়সী বশির একটি সামরিক হাসপাতালেও বেশ কিছু দিন কাটিয়েছিলেন। সুদানে লড়াই শুরু হওয়ার আগে তাঁকে আবার সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সুদানের দারফুর অঞ্চলে গণহত্যা ও ধর্ষণে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে আইসিসি তাঁকে অভিযুক্ত করেছে। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের সময় ২০১৯ সালে বশিরকে যে বছর গ্রেপ্তার করা হয় সে বছরই হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হন। বশিরের মতো তিনিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তখন থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা শুরু হয় এবং বেশ কয়েকবার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়।
সুদানে চলমান সংঘাতে ৪৫৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৩ হাজার ৭০০ জন। সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। সংঘাতের কারণে সুদান থেকে নিজ নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে দেশটিতে একটি মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সুদানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ভলকার পার্থেস বর্তমানে সুদানে অবস্থান করছেন। তিনি বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে দেশের কিছু অংশে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি এখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে খার্তুম এবং পার্শ্ববর্তী ওমদুরমানে গুলি ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।