দাবানলের ষষ্ঠ দিনের মতো আজ রোববার পুড়েছে গ্রিসের দ্বীপ ইভিয়া। রাজধানী এথেন্সের উত্তর দিকের এ দ্বীপ থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির ১৫৪টি জায়গায় দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ বছরে এ রকম দাবানল দেখেনি গ্রিসবাসী।
পার্শ্ববর্তী তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে গত ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ১৩২টি জায়গায় দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। মারা গেছে অন্তত ৮ জন। পুড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমি। ইউরোপীয় ফরেস্ট ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা। এদিকে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় গত শনিবার দাবানলে অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএনের তথ্য মতে, গত মাসে জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে বন্যায় অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই মাসে ভারতে বন্যা ও ভূমিধসে প্রায় ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় চীনে ৩০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
এ রকম তথ্য হাজির করতে গেলে পরিসংখ্যান আমাদের ভারাক্রান্ত করবে। দাবানল, বন্যা, ভূমিধসের বাইরে খরা, নদী ভাঙন ইত্যাদি বিষয় আছে যেগুলোর সঙ্গে বহুল আলোচিত জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব সময় ঘটে। কিন্তু গত ২৫-৩০ বছরে যে সব দুর্যোগ ঘটেছে সেগুলোর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। তথা মানুষ নিজেই ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠেছে।
বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যায়ের দুর্যোগ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান দেবারতি গুহ সিএনএনকে জানান, জুলাইয়ে বিশ্বে ২০৮টি বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। যা এক দশকের গড় দুর্যোগের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী পিটার স্কট বলেন, সম্প্রতি যেসব দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে এসব যে আমাদের বছরের পর বছর ধরে কয়লা পোড়ানো, জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে হচ্ছে তাতে সন্দেহের বিন্দু মাত্র কারণ নেই। এসব বিষয়ে আমরা ২০ বছর আগে থেকে সতর্ক করে আসছি।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন বা কপ ২৬ এর সমন্বয়ক ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ আলোক শর্মা বলেন, বিশ্ব বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে চলে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার কিছু বাকি আছে বলে আমার মনে হয় না। বিশ্বে যা ঘটছে তা তো প্রতি নিয়ত আমরা দেখছি।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার জাতিসংঘের ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চ্যাঞ্জের (আইপিসিসি) প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। আর অলোক শর্মার নেতৃত্বে চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে কপ ২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।