১৯৭৭–২০২৪: বোয়িং নির্মিত উড়োজাহাজের যত মারাত্মক দুর্ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ৩৩
২০১৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোয় দুর্ঘটনায় পতিত বোয়িংয়ের একটি বিমান। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমান, দুর্ঘটনা এতটাই ভয়াবহ যে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মুয়ান বিমানবন্দরে যে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে সেটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্কিন কোম্পানি বোয়িং। এই প্রথম নয় যে, বোয়িং নির্মিত উড়োজাহাজ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হলো। এর আগেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় পড়ার রেকর্ড আছে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজের।

জাকার্তায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনা: ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের পর মাত্র ১৩ মিনিটে লায়ন এয়ারের ফ্লাইট ৬১০ সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়। ২০১৮ সালে সংঘটিত এই দুর্ঘটনায় ৮৯ জন নিহত হন। তদন্তে দেখা যায়, উড়োজাহাজের অ্যান্টি-স্টল সিস্টেম (এমসিএএস) ভুলভাবে সক্রিয় হয়ে গিয়েছিল, যা উড়োজাহাজটিকে নিচের দিকে টেনে নেয়।

২০১৮ সালে জাকার্তায় দুর্ঘটনায় পড়া বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান। ছবি: সংগৃহীত

পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৩০২ ইথিওপিয়া থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি যাওয়ার পথে উড্ডয়নের ৬ মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৫৭ জন নিহত হন। এই দুর্ঘটনার কারণও ছিল একই এমসিএএস সফটওয়্যারের ত্রুটি।

এই দুটি দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজের সব উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করা হয় এবং বোয়িং বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

বিশ শতক থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল স্পেনের টেনেরিফ বিমানবন্দরে। ১৯৭৭ সালে কুয়াশার মধ্যে একই রানওয়েতে কেএলএম এবং প্যান অ্যামের দুটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজের সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৫৮৩ জন নিহত হন। এই দুর্ঘটনা আকাশপথে নিরাপত্তায় নতুন প্রটোকল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এরপর ১৯৮৫ সালে জাপান এয়ারলাইনসের দুর্ঘটনায় পতিত ফ্লাইট–১২৩ উড়োজাহাজটিও ছিল বোয়িং ৭৪৭ এসআর মডেলের। দুর্ঘটনায় পতিত উড়োজাহাজটি টোকিও থেকে ওসাকার দিকে যাওয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পর্বতে পতিত হয়। এতে ৫২০ জন নিহত হন। উড়োজাহাজের টেইল সেকশনে আগের মেরামত সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এটি এখনো একক বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা।

স্পেনের টেনেরিফ বিমানবন্দরে দুটি বিমানের সংঘর্ষের পর পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে বোয়িংয়ের ৭৭৭–২০০ ইআর মডেলের একটি উড়োজাহাজ নিখোঁজ হয়। দীর্ঘদিন পর উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরে পাওয়া যায়। তবে এটি কীভাবে নিখোঁজ হলো তা আজও রহস্য।

এর বাইরে, ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার সময় পূর্ব ইউক্রেনের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় বোয়িংয়ের একটি উড়োজাহাজ। এতে ২৯৮ জন নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীরা উড়োজাহাজটিকে ভূপাতিত করেছিল।

আলোচিত নাইন–ইলেভেনের সময় অর্থাৎ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং পেন্টাগনে হামলার ঘটনায়ও সন্ত্রাসীরা বোয়িং ৭৫৭ এবং ৭৬৭ মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহার করেছিল। এই ঘটনায় ২ হাজার ৯৭৭ জন নিহত হন। এই ঘটনা বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ নিরাপত্তায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।

২০০০ সালে ফিলিপাইনের একটি বোয়িং ৭৩৭-২০০ উড়োজাহাজ খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৩১ জন নিহত হন।

২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭ মডেলের একটি উড়োজাহাজ অবতরণের সময় আঘাত পায়। এতে তিনজন নিহত হন এবং ১৮০ জন আহত হন।

২০২০ সালে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজ ইরানের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। এতে ১৭৬ জন নিহত হন। ইরান এটি ভুলবশত ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে।

জাপানে ১৯৮৫ সালে দুর্ঘটনায় পড়া জাপান এয়ারলাইনসের সেই বিমান। ছবি: সংগৃহীত

সর্বশেষ জেজু এয়ারের ফ্লাইট ৭ সি-২২১৬ স্থানীয় সময় আজ রোববার সকাল ৯টা ৭ মিনিটে মুয়ান বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৪৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু নিয়ে জেজু এয়ার নামের বিমান পরিবহন সংস্থার উড়োজাহাজটির মডেল ছিল বোয়িং ৭৩৭–৮০০।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, সিএনএন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও ফ্লাইটরাডার

সাইবার ট্রাক বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিও মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন

ইলন মাস্ককে ‘মুখোশ টেনে ছিঁড়ে ফেলার’ হুমকি দিলেন স্টিভ ব্যানন

বিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক মাত্র ৫০০ জন

পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের প্রস্তাবে সিরিয়াজুড়ে বিতর্ক