Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব

বাংলাদেশি পাসপোর্টে মালিহার শত দেশ ভ্রমণ, মার্কিন গণমাধ্যমের বিস্ময়

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশি পাসপোর্টে মালিহার শত দেশ ভ্রমণ, মার্কিন গণমাধ্যমের বিস্ময়

২০২২ সালেই শততম দেশে পা রাখেন বাংলাদেশি পর্যটক ফাইরুজ মালিহা। সে সময় তাঁকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবার ‘বাংলাদেশি পাসপোর্ট’ নিয়ে মালিহার শতাধিক দেশ ভ্রমণে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিবেদন ছেপেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি। 

১৩ ডিসেম্বর শিরোনামে বাংলাদেশি পাসপোর্টকে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘খারাপ’ পাসপোর্টগুলোর একটি উল্লেখ করে সিএনবিসি জানায়, মালিহা ফাইরুজের স্মৃতিতে তাঁর প্রথম দেশ ভ্রমণ ছিল বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি ওই ভ্রমণ করেছিলেন। 

লন্ডন ভ্রমণের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সিএনবিসিকে মালিহা বলেন, ‘বেশির ভাগ বাচ্চাই বিমানে চড়লে কান্নাকাটি, রাগারাগি করে। কিন্তু আমি তা করিনি—আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। মেঘের মধ্য দিয়ে উড়ে যাওয়ার কথা আমার মনে আছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম—আমি আসলে একটি পাখি।’ 

ভ্রমণের সময় শৈশবের সেই উত্তেজনা মালিহা এখনো অনুভব করেন। একে একে বর্তমানে ১০২টি দেশ ঘোরা হয়ে গেছে তাঁর। পৃথিবীর সব দেশ ঘুরে দেখতে তাঁর মিশন এখন মাঝপথে আছে। 

ঘানায় ফাইরুজ মালিহা

মজার বিষয় হলো গত অক্টোবরেই ভ্রমণবিষয়ক আন্তর্জাতিক ‘নোম্যাডমেনিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন মালিহা। মূলত ভ্রমণে ব্যতিক্রম কোনো কিছু করে দেখানোর কৃতিত্বস্বরূপ প্রতিবছর এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এবার নানা কারণে ১১ জনকে এই পুরস্কারটি দেওয়া হলেও মালিহাকে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য।

বাংলাদেশি পাসপোর্টকে পৃথিবীর সপ্তম ‘বাজে’ পাসপোর্ট আখ্যা দিয়ে নোম্যাডমেনিয়া কর্তৃপক্ষ লিখেছে, ‘এই পাসপোর্ট নিয়ে দেশে দেশে ঘুরতে গিয়ে এমনও হয়েছে যে মালিহাকে বের করে দেওয়া হয়েছে, আটক করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, অভিবাসন কারাগারে রাখা হয়েছে, তল্লাশি করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, হয়রানি এমনকি লাঞ্ছিতও করা হয়েছে। কিন্তু এসব কিছুই তার ভ্রমণের চেতনাকে ম্লান করেনি।’ 

সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভিসা ছাড়াই পৃথিবীর ৪০টি দেশে ভ্রমণ করা যায়। অন্যদিকে পাসপোর্টের র‍্যাঙ্কিংয়ে সবার ওপরে থাকা সিঙ্গাপুরিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে ভিসা ছাড়াই পৃথিবীর ১৯৩টি দেশে প্রবেশ করা যায়। 

পাসপোর্টের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে ফাইরুজ মালিহাও জানান, বিষয়টি তাঁর ভ্রমণকে অনেক কঠিন করে তুলে। উদাহরণস্বরূপ—কিরগিজস্তানে ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করার আগেই মালিহার প্রয়োজন ছিল সেই দেশ থেকে কোনো অফিশিয়াল চিঠি কিংবা কোনো ট্রাভেল এজেন্সির আমন্ত্রণপত্র। সেই আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতে মালিহাকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি একটি ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজ কিনতে হয়েছিল। এরপরও ভিসা পেতে তাঁকে পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। 

সিএনবিসি জানায়, ১৬ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন মালিহা। পরবর্তীকালে তিনি পূর্ব আফ্রিকা, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করেছেন। বর্তমানে তিনি জার্মানির বার্লিনে বসবাস করছেন এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। 

ভ্রমণে গায়ের রং একটি বড় ইস্যু। মালিহার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশিদের নিয়ে বিভিন্ন দেশের একটি বদ্ধমূল ধারণা যে—তারা অবৈধ অভিবাসী। 

মালিহা জানান, একজন নারী হয়ে একা একা ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর নানা বিষয়কে সহ্য করতে হয়। আর এর সঙ্গে যদি কারও জাতীয়তার ইস্যুও যোগ হয়, তবে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়ে যায়। 

জাতীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শ্রেণি, শিক্ষা কিংবা আর্থিক—এই বিষয়গুলোতে আমি খুব ভালো করেই সক্ষম। তারপরও মানুষেরা আমাকে একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবেই গণ্য করে।’ 

সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে মালিহা জানান, আফ্রিকার দেশ ক্যাপ ভার্দে ভ্রমণ করতে গেলে তাঁকে সেই দেশটির বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় ভিসা এবং কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও শুধু পাসপোর্টের জন্য তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় দেশটিতে। শুধু তা-ই নয়, যে দেশ থেকে তিনি বিমানে উঠেছিলেন সেই সেনেগালে ফেরত পাঠানোরও হুমকি দিয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের যুক্তি ছিল, মাত্র তিন-চার দিনের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কেউ ক্যাপ ভার্দে ভ্রমণ করে না। যদিও দেশটি আসলে একটি ছোট দ্বীপ মাত্র। তবে ১৭ ঘণ্টা আটক রাখার পর শেষ পর্যন্ত মালিহাকে ঢুকতে দিয়েছিল তারা। কারণ, জাতিসংঘে কর্মরত তাঁর মা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। 

মালিহার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ক্যাপ ভার্দের ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল সিএনবিসি। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

পাসপোর্টের জন্য বাজে অভিজ্ঞতার ঝুলিটি পূর্ণ হয়ে গেলেও এগুলো মালিহার ভ্রমণকে থামিয়ে দিতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর ভ্রমণে নেতিবাচক বিষয়গুলোর চেয়ে ইতিবাচকের পাল্লাই ভারী। 

তিনি বলেন, ‘এই পৃথিবীটা সৌন্দর্য, দয়া ও উদারতায় ভরপুর এবং আমি অসংখ্য স্থানে এত এত মানুষের সঙ্গে সংযোগ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’ 

আরও বলেন, ‘যখন জীবনে কিছুই আর ঘটছে না, তখন একটা কিছু ঘটাতেই আমি ভ্রমণ করি এবং পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হতেই আমার এই ভ্রমণ।’

যাঁরা বিশ্বভ্রমণ করতে চান, তাঁদের উদ্দেশে মালিহার পরামর্শ হলো—শুরু করে দিন। তাঁর মতে, জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং এর শুরুটাই সবচেয়ে কঠিন।

মালিহা বলেন, ‘কোথাও ছোট করে শুরু করুন। নিজের দেশেই একা একা ভ্রমণ করুন, আশপাশের দেশগুলোতে যান এবং তারপরই আরও বেশি কিছু করার সাহস আপনার মধ্যে সঞ্চারিত হবে।’ 

সবশেষে তিনি বলেন, ‘সব সময় এমন সব মানুষের মাঝে থাকুন যারা আপনাকে মূল্য দেয় এবং আপনার লক্ষ্যে বিশ্বাস রাখে।’

অজানা অনেক কথায় ২০ বছর পর নীরবতা ভাঙলেন মাইকেল কন্যা প্যারিস

বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করা নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ, ডেমোক্র্যাট শিবিরে উল্লাস

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘যেকোনো যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত চীন

কুম্ভমেলায় ‘কুবেরের ভান্ডার’, ৪৫ দিনে নৌকার মাঝির আয় ৩০ কোটি রুপি

মেক্সিকোর সমান বড় এই বন নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন গবেষকেরা

ইউক্রেনকে আর কোনো গোয়েন্দা তথ্য দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

ভবিষ্যতে রুশ-মার্কিন আলোচনায় প্রাধান্য পাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নাগরিকত্ব বিক্রি করছে ছোট্ট এক দ্বীপদেশ

ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে কানাডার অভিযোগ

বিশ্বের অর্ধেক কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য দায়ী মাত্র ৩৬টি জ্বালানি কোম্পানি