অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার কথা শোনা যাচ্ছে বিগত কয়েক দশক ধরেই। চীনের উত্থান, সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর রাশিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর পর বিগত কয়েক বছরে এ আলাপ আরও জোরদার হয়েছে। গত শুক্রবার শেষ হওয়া সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) দুদিনব্যাপী ২২ তম সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই আলাপে নতুন পারদ চড়িয়েছেন।
উজবেকিস্তানের প্রাচীন শহর সমরখন্দে গত বৃহস্পতিবার সম্মেলনের প্রথম দিনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পুতিন ও সি। বৈঠকে পুতিন সিকে বলেন, ‘পশ্চিমারা বিশ্বে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর। যেকোনো দেশের বিকাশের পথে এটা বাধা।’
সম্মেলনের শেষ দিন গত শুক্রবার অংশগ্রহণকারী ১০ দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের উদ্দেশ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে পশ্চিমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার, অবৈধ নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা অত্যন্ত ভয়াবহ। তবে সুখবর হলো, পশ্চিমাদের বাইরে ক্ষমতার নতুন নতুন কেন্দ্রে গড়ে উঠছে। নতুন কেন্দ্রগুলো নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।’
সম্মেলনের দুদিনই প্রায় অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বিশ্ব ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়ে সি বলেছেন, ‘একতরফা জয়ের খেলা অর্থাৎ জিরো-সাম গেম শেষ করতে হবে। বিদায় জানাতে হবে ব্লকভিত্তিক রাজনীতিকে। আরও বেশি ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্তর্জাতিক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়তে আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এদিকে, এই সম্মেলনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পুতিনের অবস্থান। সম্মেলনে সি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনকে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোদি পুতিনকে বলেন, ‘মহামান্য, এটা তো যুদ্ধ করার সময় নয়। উত্তরে পুতিন বলেছেন, আপনাদের উদ্বেগ আমরা বুঝতে পারি। যত শিগগির সম্ভব যুদ্ধের ইতি টানার চেষ্টা করছি আমরা।’ আগের দিন সির উদ্বেগের জবাবেও প্রায় একই ধরনের উত্তর দিয়েছিলেন পুতিন।
এসসিও সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মোদি ও সির প্রশ্নে পুতিন চাপে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। শুক্রবার ওয়াশিংটনে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে সারা বিশ্বে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।’ কিন্তু সম্মেলন শেষে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছেন, ‘দনবাসে আমাদের যুদ্ধ শেষ করার তাড়া নেই।’ ফলে পুতিন ইউক্রেন ইস্যুতে নিজের অবস্থান নিয়ে স্থির থাকতে পারছেন না।