ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এ বছর ১০ লাখ টনের বেশি পানি সাগরে ছাড়তে চায় জাপান।
পরিশোধনের পর জাতীয় মানদণ্ড অনুযায়ী তেজস্ক্রিয় কণার নিরাপদ মাত্রা নিশ্চিত করেই এই পানি সাগরে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেছে পরিচালনাকারী সংস্থা।
জাপানের এই প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নিরাপদ বললেও প্রতিবেশী দেশগুলো সাগর দূষণের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
দেশটির মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিরোকাজু মাতসুনো বলেছেন, এ বছরের বসন্ত বা গ্রীষ্মেই পানি সাগরে ফেলার পরিকল্পনা আছে। তবে আইএইএর প্রতিবেদন পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
জেলেরাও তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার বিরোধিতা করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এতে সাগরের জলজ সম্পদ দূষণের শিকার হবে। তখন সামুদ্রিক খাবারের ওপর আস্থা হারাবে মানুষ। এর ফলে তাঁদের জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়বে।
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভয়াবহ এক ভূমিকম্প এবং এ থেকে সৃষ্ট সুনামির বিশাল জলোচ্ছ্বাসে জাপানের ফুকুশিমায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারটি পারমাণবিক চুল্লি প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইউক্রেইনের চেরনবিলের পর জাপানের ফুকুশিমার বিপর্যয়কে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হয়। দুই ঘটনাতেই প্রকৃতি ও জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়; আশপাশ থেকে লাখ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ফুকুশিমার ঘটনায় তেজস্ক্রিয়তা অপসারণের কাজ এর মধ্যে শুরু হলেও শেষ হতে চার দশক লেগে যেতে পারে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।
পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করা তেজস্ক্রিয় পানি প্রতিদিনই পরিশোধিত হয়ে ট্যাংকে জমা হয়। সাগরে ফেলার জন্য এই পানির তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের বেশির ভাগটাই দূর করা হলেও অন্য তেজস্ক্রিয় উপাদান ট্রিটিয়াম এখনো জাতীয় নিরাপদ মানের চেয়ে বেশি আছে বলে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানি টেপকো জানিয়েছে।
ট্রিটিয়াম পানি থেকে আলাদা করা যেমন খুব কঠিন, তেমনি এর মাত্রা বেশি থাকলেও তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আর তাই, সাগরে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি ছাড়ার আগে ট্রিটিয়ামকে পাতলা করে বিপজ্জনক মাত্রার নিচে নামানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।