পাকিস্তান থেকে কয়েক লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসী উচ্ছেদের পরিকল্পনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে তালেবান। সীমান্তে হামলার জন্য আফগানিস্তানের জঙ্গি সংগঠনের দিকে যে অভিযোগ ইসলামাবাদ তুলছে, তাও অস্বীকার করেছে প্রতিবেশী দেশটি।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক্স প্ল্যাটফর্মে বলেন, আফগান শরণার্থীদের প্রতি পাকিস্তানের ব্যবহার সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তাঁরা পাকিস্তানের নিরাপত্তা সমস্যার সঙ্গে জড়িত নয়। যতক্ষণ না তারা স্বেচ্ছায় পাকিস্তান ত্যাগ করবে, ততক্ষণ সে দেশের উচিত তাদের সহ্য করা।
বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে আফগান শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মুতালিব হাক্কানি বলেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানের এই দাবিগুলো অস্বীকার করছি কারণ, আফগানরা তাদের নিরাপত্তার জন্যই অন্যান্য দেশে চলে গেছে। যখন কেউ তার নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশে চলে যায়, তখন সেখানে গিয়ে সে নিরাপত্তাহীনতা চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
গত কয়েক দশক ধরেই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে অনেক আফগান। সোভিয়েত আগ্রাসন পরবর্তী গৃহযুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দখলদারির সময় কয়েক দশকের সংঘর্ষে অনেক আফগানই চলে গেছে পাকিস্তানে। ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে প্রায় ৬ লাখ আফগান পাড়ি জমিয়েছে পাকিস্তানে। জাতিসংঘের মতে, প্রায় ১৩ লাখ আফগান পাকিস্তানে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত রয়েছে এবং আরও ৮ লাখ ৮০ হাজার আফগান পাকিস্তানে থাকার আইনি মর্যাদা পেয়েছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পাকিস্তানকে আফগান শরণার্থীদের জন্য তাদের ‘ঐতিহাসিক সমর্থন’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আফগান শরণার্থীরা যাতে মর্যাদার সঙ্গে এবং নির্বাসিত হয়ে আফগানিস্তানে ফেরার ভয় থেকে মুক্ত হয়ে জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই সংস্থা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘আফগান শরণার্থীরা পাকিস্তানে অবিশ্বাস্য রকমের অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। সেখানে হয় তাদের পাকিস্তানে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধনের জন্য কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে; নয়তো অন্য দেশে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে থাকতে হবে। আফগানিস্তানে জোর করে ফেরত পাঠানো হলে তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।’
পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চাওয়া আফগানদের আবেদনের নিবন্ধন এবং পর্যালোচনার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনকে (ইউএনএইচসিআর) আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। সে সঙ্গে পাকিস্তানকে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।