অর্থনীতি চাঙা করতে চীনা পর্যটকদের ভিসা ছাড়াই থাইল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির নতুন সরকার। পাশাপাশি ডিজেলের কর মওকুফ, বিদ্যুতের দাম কমানো এবং দেশের কৃষকদের ঋণ পরিশোধও স্থগিত করেছে নতুন প্রধানমন্ত্রী সেরেথা থাভাইসিনের সরকার। গত বুধবার দেশটির সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
থাইল্যান্ডের জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী সেরেথা থাভাইসিন গত আগস্টের শেষ দিকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটির অর্থনীতি আগে থেকেই অনেকটা চাপের মুখে রয়েছে। বিষয়টি আরও নেতিবাচক দিকে যায় রপ্তানি কমে যাওয়া এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে। তাই থাভাইসিনের সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা।
সরকারি ঘোষণা অনুসারে, সরকার এখন থেকে ডিজেলে প্রতি লিটারে আড়াই বাথ কর মওকুফ করবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতি লিটার ডিজেলের দাম কমে আসবে ৩০ বাথের নিচে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে। কেবল তাই নয়, থাভাইসিনের সরকার বিদ্যুতের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত চীন ও কাজাখস্তানের পর্যটকেরা বিনা ভিসায় থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী সেরেথা থাভাইসিন বলেছেন, ‘ফলাফল কী হয় তা দেখার জন্যই এই অস্থায়ী সুবিধাগুলো দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিভাগের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন। সব বিভাগই নতুন এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সমন্বয় করতে প্রস্তুত।
কোভিডের আগে থাইল্যান্ডের পর্যটনশিল্পে সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী ছিল চীন। থাইল্যান্ডে আসা বিদেশি পর্যটকদের ২৮ শতাংশই ছিল চীনা। সেরেথা জানান, কাজাখস্তানের লোকদেরও থাইল্যান্ড ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে। পর্যটক টানার বিষয়টি উল্লেখ করে সরকারের মুখপাত্র চাই ওয়াচারোনকে বলেন, সরকার এ বছর (২০২৩ সাল) সব মিলিয়ে ২ কোটি ৮০ লাখ পর্যটক আশা করছে। পর্যটক টানতে সরকার এই খাতে ৩৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করারও প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে থাইল্যান্ড ৪ কোটি পর্যটক টানতে চায়।
চাই ওয়াচারোনকে বলেন, ‘পর্যটনই এখন একমাত্র খাত, যা সচল রয়েছে এবং আমরা আশা করছি এই খাত থেকে দেশ যথেষ্ট আয় করতে সক্ষম হবে ভবিষ্যতে।’ তিনি জানান, কোভিডের আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে প্রায় ৪ কোটি পর্যটক থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছিল। এর মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখই ছিল চীন থেকে আসা। এ বছর সরকারর অন্তত ৫০ লাখ চীন পর্যটক আশা করছে।
এ ছাড়া থাই সরকার দেশটির কৃষকদের কৃষিঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্রঋণ আগামী তিন বছরের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। দেশটির উপ-অর্থমন্ত্রী জুলাপান অমরনবিবাত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঋণ স্থগিতের পাশাপাশি সরকার আগামী এক বছরের জন্য ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর ৭ শতাংশই রাখবে।
সরকারের এসব উদ্যোগের প্রশংসা করে থাই চেম্বার অব কমার্স বুধবার জানিয়েছে, এসব উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। গত বছর দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার দেশে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরির বাড়ানোসহ আরও বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সেরেথা থাভাইসিন নিজে বিষয়টি জানিয়েছেন।