মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল শুক্রবার রাজধানী নেপিডোতে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের চার বছর পূর্তির এক দিন আগে গতকাল এ সিদ্ধান্ত নেয় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী।
জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪২৫ ধারা অনুযায়ী কমান্ডার ইন চিফসহ পরিষদের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠানের জন্য আরও অনেক কাজ এখনো বাকি। বিশেষ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এই অস্থিরতা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এসব লড়াইয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্রোহীদের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে সরকারি বাহিনী। সম্প্রতি এমনকি সেনাবাহিনীতে ফাটল ধরার খবরও সামনে আসছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম, বিবিসি জানিয়েছে, এককালে দুর্ধর্ষ হিসেবে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে ফাটল ধরানোর নেপথ্যে রয়েছে বিদ্রোহী যোদ্ধার বেশে থাকা গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের হয়ে কর্মরত গুপ্তচররা। বর্তমানে দেশটির এক-চতুর্থাংশের কম ভূখণ্ডে সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মিয়ানমার-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূতের মতে, জান্তা বাহিনী এখনো প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেগুলো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে।
গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের হয়ে কর্মরত গুপ্তচরদের ওয়াটারমেলন বা তরমুজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরা বাইরে সবুজ, ভেতরে বিদ্রোহী লাল। অর্থাৎ তারা বাহ্যিকভাবে সামরিক বাহিনীর প্রতি অনুগত কিন্তু গোপনে গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করে, যাদের প্রতীকী রং লাল। সেনাবাহিনীর একজন মেজর জানান, সরকারি বাহিনীর বর্বরতাই তাঁকে পক্ষ পরিবর্তনের পথে ধাবিত করেছে।
জহ (ছদ্মনাম) নামের ওই মেজর বলেন, ‘আমি নির্যাতিত বেসামরিক ব্যক্তিদের লাশ দেখে কেঁদেছি। ওরা কীভাবে আমাদেরই জনগণের প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে? আমাদের দায়িত্ব বেসামরিকদের রক্ষা করা। কিন্তু এখন আমরা মানুষ হত্যা করছি। এটি আর সেনাবাহিনী নেই, এটি এখন এমন একটি শক্তি, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।’