চলতি বছর ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ মাসে ইরানে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ২৩ শতাংশ বেড়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ইরানে ৮৫৩টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির প্রতিবাদ হিসেবে দেশটিতে নিয়মিত অনশন পালন করছেন রাজনৈতিক বন্দীরা।
বিশ্ব মৃত্যুদণ্ড বিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার নরওয়েভিত্তিক এনজিও ইরান হিউম্যান রাইটস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার লাইভ অনুষ্ঠান করে। সেখানে এসব তথ্য দেওয়া হয় বলে ডয়েচে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ইরানে মৃত্যুদণ্ড ও দণ্ডিতদের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং সাপ্তাহিক অনশনের খবর জানানোর উদ্দেশে এ অনুষ্ঠান হয়। ইরানি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মদির চিঠি পড়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়৷
তিনি এখন রাজধানী তেহরানের একটি জেলে আছেন। ৩৭ সপ্তাহ ধরে তিনি ও অন্যরা সাপ্তাহিক এই অনশন কর্মসূচি পালন করছেন৷ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকর্মীদের ইরানে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করতে সহায়তা করার জন্য আবেদন করেছেন নার্গিস৷
এক বছরে ৮০০টিরও বেশি মৃত্যুদণ্ড
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইরানে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ২৩% বেড়েছে৷ ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক অপ্রাতিষ্ঠানিক এই বার্তা সংস্থাটি এ সময়ে কমপক্ষে ৮১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের খবর দিয়েছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও ২০২৩ সালে ইরানে ৮৫৩টি মৃত্যুদণ্ডের কথা বলছে—যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ডের প্রায় ৭৫ ভাগ৷
মে মাসে ডয়েচে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আরও ৪৭ জনের নাম আছে, গত ১২ মাসে যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷'
এদের নাম দ্বিতীয় কোনো উৎস থেকে নিশ্চিত করা যায়নি বলে ছাপানো হয়নি বলে জানান তিনি৷
জাতিগত গোষ্ঠীদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে
জাতিগত সংখ্যালঘু, যেমন কুর্দি ও বালুচি সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি হারে মৃত্যুদণ্ডের শিকার হচ্ছে৷ ইরানে বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের হলেও কুর্দি ও বালুচি সম্প্রদায়ের সিংহভাগ সুন্নি সম্প্রদায়ের৷
এই সম্প্রদায়ের লোকজন অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকাগুলোতে থাকেন এবং দীর্ঘসময় ধরে তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছেন৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫৪৫টি মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে অনেকগুলোই এমন অপরাধের জন্য হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডযোগ্য নয়, যেমন মাদক–সম্পর্কিত অপরাধ ও ডাকাতি৷