ফরাসি সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বব্যাপী ‘বিকিনি কিলার’ হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি তাঁকে নিয়ে ‘দ্য সার্পেন্ট’ নামে নাটকও তৈরি করেছে। আজ এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, কাঠমান্ডুতে দুই পর্যটককে হত্যার দায়ে ১৯ বছর নেপালের কারাগারে ছিলেন শোভরাজ। তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে ফ্রান্সে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
চার্লস শোভরাজ ১৯৭৫ সালে কাঠমান্ডুতে দুই পর্যটককে হত্যার দায়ে কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। নিহত দুই পর্যটক হলেন—যুক্তরাষ্ট্রের কোনি জো ব্রোনজিক ও তাঁর বন্ধু লরেন্ট ক্যারিরি। দুটি পৃথক বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। তাঁর আইনজীবীরা একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, শোভরাজের বয়স ৭৮ এবং তিনি ভালো আচরণের জন্য মুক্তি পাওয়া যোগ্য। সেই পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল বুধবার শোভরাজকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
নেপালের আইনে এমন বিধান রয়েছে যে, কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি যদি ভালো আচরণ করেন এবং কারাদণ্ডের মেয়াদের ৭৫ শতাংশ পূর্ণ করে ফেলেন, তবে তাঁকে মুক্তির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শোভরাজকে ক্রমাগত কারাগারে রাখা বন্দীর মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর মুক্তির আরেকটি কারণ হিসেবে হৃদ্রোগের নিয়মিত চিকিৎসার কথা উল্লেখ করেছেন আদালত। শোভরাজের আইনজীবী বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যেই (আজ) তাঁকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।’
চার্লস শোভরাজ যেভাবে ‘বিকিনি কিলার’ হয়ে উঠেছিলেন
গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকের গোড়ার দিকে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। সেসব দেশে নারী পর্যটকেরা খুন হতে শুরু করলেন এবং নিহত বেশির ভাগ নারী পর্যটকই ছিলেন বিকিনি পরা। পরে অভিযোগ উঠল, এসব খুন করেছেন চার্লস শোভরাজ নামের এক ব্যক্তি। যেহেতু তাঁর অধিকাংশ খুনের শিকারের পরনেই থাকত বিকিনি, তাই তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বিকিনি কিলার’। খুন করে সরীসৃপের মতো নিঃশব্দে পালিয়ে যেতেন শোভরাজ। তাই বিবিসি তাঁকে নিয়ে নির্মিত নাটকটির নাম দিয়েছিল ‘দ্য সারপেন্ট’। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ পর্বে সিরিজটি প্রচার করেছিল বিবিসি।
শোভরাজের বয়স এখন ৭৮। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় এবং মা ভিয়েতনামের নাগরিক। শোভরাজের জন্ম ভিয়েতনামে হলেও তিনি ছিলেন ফ্রান্সের নাগরিক। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাতায়া সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পরা ছয় নারীকে মাদক খাওয়ানোর পর হত্যার অভিযোগে শোভরাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল থাই সরকার।
ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে শোভরাজ ফ্রান্সে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সালে তিনি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি ক্যাসিনোতে গ্রেপ্তার হন এবং মার্কিন পর্যটক কোনি জো ব্রোনজিককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। কোনি জো ব্রোনজিকের মরদেহ কাঠমাণ্ডুর একটি গম ক্ষেতে পাওয়া গিয়েছিল। তবে তাঁকে হত্যার কথা অস্বীকার করেছিলেন শোভরাজ। তাঁর আইনজীবী বলেছেন, ‘অভিযোগটি অনুমানের ভিত্তিতে করা হয়েছে।’
এর বেশ কয়েক বছর পর তিনি ব্রোনজিকের কানাডীয় বন্ধু লরেন্ট কেরিয়ারকে হত্যার জন্যও দোষী সাব্যস্ত হন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি কাঠমাণ্ডুর কারাগারে বন্দী ছিলেন।
একাধিক ভাষায় পারদর্শী ছিলেন শোভরাজ। তিনি সুদর্শন এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। একাধিক জাল পাসপোর্ট ছিল তাঁর। এসব বৈশিষ্ট্যই তিনি শিকারকে কবজায় আনতে ব্যবহার করতেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এশিয়ার অনেক দেশে তাঁকে নিয়ে বই লেখা হয়েছে এবং চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছে। গত বছর বিবিসি ও নেটফ্লিক্স যৌথভাবে তাঁকে নিয়ে ওয়েব সিরিজ তৈরি করেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, ব্যাংকক পোস্ট