আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ইউক্রেনে অভিযান চালাতে গিয়ে উল্টো ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে নিজ দেশের কুরস্ক অঞ্চলের একাংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে রাশিয়া। অঞ্চলটি পুনরুদ্ধারে রুশ বাহিনীকে সহায়তার জন্য প্রায় ১১ হাজার সেনা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে সিউল, ওয়াশিংটন ও কিয়েভ কুরস্কে উত্তর কোরীয় সেনাদের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায়। দক্ষিণ কোরিয়ার ধারণা, ইতিমধ্যেই শতাধিক সেনা নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। তবে পলাতক উত্তর কোরীয় সেনা এবং অন্যান্য সামরিক বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, রাশিয়ার হয়ে লড়াইরত উত্তর কোরীয় সেনাদের অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই।
সিউলের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার বেশির ভাগ সেনা এলিট স্টর্ম কর্পস ইউনিটের সদস্য। আধুনিক যুদ্ধের বিষয়ে খুব বেশি জ্ঞান না থাকলেও তাঁদের মনোবল বেশ দৃঢ়। পলাতক লি হিউন সিউং বলেন, যাঁদের উচ্চতা বেশি এবং যাঁরা শারীরিকভাবে দক্ষ, শুধু তাঁদেরই স্টর্ম কর্পসের জন্য নির্বাচন করা হয়।
লি হিউন সিউং ২০০০ সালের গোড়ার দিকে উত্তর কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্সকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ২০১৪ সালে তিনি পালিয়ে যান। তাঁদের তিনি মার্শাল আর্ট থেকে শুরু করে ছুরি চালানোর কৌশল, রান্নাঘরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অস্ত্র তৈরি করতে শিখিয়েছিলেন। যদিও স্টর্ম কর্পসের প্রশিক্ষণ উত্তর কোরিয়ার অন্যান্য সাধারণ ইউনিটের চেয়ে আধুনিক। তবু এই কর্পসের সেনারা অপুষ্টিতে ভুগে থাকেন।
রাশিয়ায় মোতায়েন করা সেনাদের কিছু অনলাইন ভিডিও পালিয়ে যাওয়া উত্তর কোরিয়ার সেনা হ্যানেউল দেখেছেন। সেখানে তরুণ ও দুর্বল সেনাদের দেখা যাচ্ছিল। এগুলো পিয়ংইয়ংয়ের প্রচারিত ভিডিওর বিপরীত। তারা যেসব ভিডিও প্রচার করেছে, সেগুলোতে পুরুষদের লোহার শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে এবং এক ঘুষিতে বরফের ব্লক ভেঙে ফেলতে দেখা যায়।
হ্যানেউল বলেন, সেনাবাহিনীতে থাকার পুরোটা সময় তিনি একবার মাত্র তিনটি গুলি করেছিলেন। সেটিও শুধু অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুবাদে। সে সময় ডিমিলিটারাইজড জোনে ঢুকে একজন ক্ষুধার্ত কৃষক শাকসবজি খুঁজছিলেন। হ্যানেউল বলেন, তখন অনুপ্রবেশকারীদের ওপর গুলির নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই কৃষককে তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন।
হ্যানেউল পালিয়ে যাওয়ার পর গত এক দশকে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি কতটা পরিবর্তন হয়েছে, তা অবশ্য বলা কঠিন। কারণ, দেশটি থেকে তথ্যের প্রবাহ খুব সীমিত। তবে মনে করা হচ্ছে, দেশটির শাসক কিম জং-উন তাঁর সীমিত সম্পদের বেশির ভাগই ব্যয় করছেন ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য—সেনাবাহিনীর জন্য় নয়।
২০১৯ সালে পালিয়ে যাওয়া আরেক সেনাসদস্য রিউ সেওংহুন সাত বছর বিমানবাহিনীতে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জানান, তাঁদের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি, ধীরে ধীরে খাবার হিসেবে ভাত দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর ভাষায়, ‘সেনাদের কয়েক দিনের জন্য অল্প পরিমাণ চাল দিয়ে পার্বত্য এলাকায় পাঠিয়ে বলা হয়, এটা তাঁদের সারভাইভাল ট্রেনিংয়ের (বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ) অংশ।’