তালেবানের কাবুল দখল হয়তো সময়ের ব্যাপার। কিন্তু শেষরক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি সরকারকে বিভিন্নভাবে তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। তালেবান ঠেকাতে আফগান সরকার তিন ধাপের রণকৌশল ঘোষণা করেছে। তীব্র চাপের মধ্যে গত বুধবার উত্তরাঞ্চলের বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ সফর করেছেন মার্কিন সহায়তাপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। উদ্দেশ্য স্থানীয় ওয়ারলর্ডদের সঙ্গে আলোচনা। তালেবানবিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠন।
দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে ইতিপূর্বে সোভিয়েত রাশিয়া এবং ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানবিরোধী বড় ধরনের প্রতিরোধ দেখা গেছে, যা যুক্তফ্রন্ট বা উত্তরাঞ্চলীয় জোট হিসেবে পরিচিত। সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, আফগান পুনর্গঠন কাউন্সিলের (এইচসিএনআর) প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহসহ বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের অনেকে সাবেক এ জোট থেকে উঠে আসা।
এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদন, বুধবার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে গনির পাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অন্যতম উজবেক ওয়ারলর্ড আবদুর রশিদ দোস্তাম এবং তাজিক ওয়ারলর্ড ও মাজার-ই-শরিফের শাসক মুহাম্মদ আতা। প্রভাবশালী এই দুই ওয়ারলর্ডের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। তাই তাঁদের মধ্যে শক্তিশালী কোনো বন্ধন তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন।
গত শতকের ৯০-এর দশকে এদের মধ্যে, মোটকথা উত্তরাঞ্চলীয় জোটের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করতে দূতিয়ালি করতেন ইরানি কূটনীতিকেরা। বর্তমানে অঞ্চলটির ওয়ারলর্ডদের মধ্যে সর্বজন গ্রহণযোগ্য কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউনূস কানুনিকে এসব বেপরোয়া ওয়ারলর্ডের মধ্যে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বলে ধরা হয়; কিন্তু বিভিন্ন কারণে তিনি কোণঠাসা।
এ অবস্থায় অনেকে তুরস্কের কথা ভাবেন। তুরস্কের সঙ্গে দোস্তামের সম্পর্ক গভীর। কিছুদিন আগে তিনি তুরস্ক থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু আঙ্কারার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক ঠিক স্পষ্ট নয়। কখনো মনে হয়, তাঁদের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক কাবুল সরকারের চেয়ে ঘনিষ্ঠ, কখনো তার উল্টো। অন্যদিকে দুস্তুমের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই), তালেবানের শীর্ষ নেতাদেরও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে।
তা ছাড়া, এসব ওয়ারলর্ড অত্যন্ত অর্থলোভী। বলা হয়ে থাকে, ২০০১ সালে যুদ্ধ শুরু করার পর এঁদের হাতে নিতে রীতিমতো টাকার বস্তা সরবরাহ করত পেন্টাগন ও তার মিত্ররা। সম্প্রতি হেরাত পতনের পর স্থানীয় ওয়ারলর্ড ইসমাইল খান তালেবানের হাতে আটক হয়েছেন। এভাবে একের পর এক প্রাদেশিক শহরের পতন অন্য ওয়ারলর্ডদের মনোবল চুরমার করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়ারলর্ডদের সঙ্গে দুর্বল ঘানি সরকারের যুক্তফ্রন্ট কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।