২০০১ সালে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ শ্রীলঙ্কাকে একটি হাতি উপহার দিয়েছিল থাইল্যান্ড। কিন্তু হাতিটিকে নির্যাতন করা হয়েছে—এমন অভিযোগে এটিকে আবারও জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ।
সোমবার এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রোববার মুথু রাজা নামের ওই হাতিটিকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ডলার খরচ করে বিমানে উড়িয়ে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।
থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ে ৪ হাজার কেজি ওজনের ওই হাতিটিকে স্টিল দিয়ে তৈরি একটি বিশেষ খাঁচায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কান একজন চিড়িয়াখানা কর্মী ছাড়াও চারজন থাই কর্মকর্তা ছিলেন।
শ্রীলঙ্কায় ওই হাতিটি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে ছিল। থাই কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মন্দিরে থাকা অবস্থায় হাতিটিকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাই উপহার হিসেবে পাঠানো মুথু রাজাকে তারা আবারও ফিরিয়ে নিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর থাই রাজার কাছে তিনি এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছেন।
থাইল্যান্ডে পৌঁছার পরই হাতিটির বাম পায়ে একটি আঘাতের স্থানে হাইড্রোথেরাপি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা উভয় দেশই হাতিকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করে। ২০০১ সালে মুথু রাজাসহ মোট তিনটি হাতি শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়েছিল থাইল্যান্ডের রাজপরিবার। পরে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি বৌদ্ধ মন্দিরের তত্ত্বাবধানে মুথু রাজাকে রাখা হয়।
প্রাণী অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, মন্দিরের কর্মীরা হাতিটিকে দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করাতো। কিন্তু হাতিটির একটি পা আঘাতের ফলে অসার হওয়ার উপক্রম হলেও কর্তৃপক্ষ তা অবহেলা করেছে। শ্রীলঙ্কার সরকারকে এ বিষয়ে বারবার অবহিত করা হলেও হাতিটির রক্ষণাবেক্ষণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে দেশটির প্রাণী ও পরিবেশ বিষয়ক একটি অধিকার সংস্থা। পরে গত বছর বিষয়টি থাই কর্তৃপক্ষকেও জানায় সংস্থাটি। এ ছাড়া হাতিটির দুর্দশার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করারও দাবি জানায় তারা।
র্যালি ফর অ্যানিমেল রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামের ওই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা পঞ্চালি পানাপিত্ত জানান, গত বছর অভিযোগ পাওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত থাই রাষ্ট্রদূত হাতিটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। পরে হাতিটির দুরবস্থা নিয়ে তিনি রিপোর্ট করলে এটিকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে অটল থাকে থাইল্যান্ড।
এ ঘটনার জের ধরে থাই কর্তৃপক্ষ উপহার হিসেবে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হাতিগুলোর অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।