নিজের দলের বিদ্রোহ সামলে অত্যন্ত বিতর্কিত রুয়ান্ডা প্ল্যান পাস করাতে পারলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। হাউস অব কমন্সে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়ার এই পরিকল্পনা বুধবার ৩১৩-২৬৯ ভোটে জয়ী হয়।
এরপর সামাজিক মাধ্যম এক্সে সুনাক লেখেন, ‘ব্রিটিশ নাগরিকেরাই ঠিক করবেন, দেশে কারা আসবেন, কারা নয়। কোনো অপরাধী চক্র বা বিদেশি কোর্ট এটা ঠিক করবে না।’
পার্লামেন্টে সুনাকের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তাঁর দলের বেশ কয়েকজন এমপি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিলেন। বিরোধীরা তো আগে থেকেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের সমর্থক নয়। ফলে ভোটাভুটিতে হেরে গেলে সুনাককে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হতো।
এই অবস্থায় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে পরিবেশমন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্টকে কপ২৮ শীর্ষ বৈঠক ছেড়ে লন্ডন ফিরে এসে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে বলা হয়।
সুনাক ও সরকারের বক্তব্য
ভোটাভুটির আগে সুনাক সামাজিক মাধ্যমে পার্লামেন্টের সদস্যদের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিতে বলেন। তাঁর দাবি, 'এটা বেআইনি অভিবাসন রুখতে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ। তিনি লিখেছিলেন, এই বিল পাস হলে কে ব্রিটেনে ঢুকতে পারবে, তা আমরা ঠিক করতে পারব। অভিবাসীদের নৌকাগুলোকে থামানোর জন্য আমাদের এই বিল পাস করাটা জরুরি।'
নৌকা থামানো মানে ব্রিটেনে আসার জন্য যে নৌকাগুলো ইউরোপ থেকে আসে এবং রক্ষণশীল দল বারবার যার বিরোধিতা করে এসেছে। এই বছর এইভাবে ২৯ হাজার মানুষ ব্রিটেনে এসেছেন। ২০২২ সালে এসেছিলেন ৪৬ হাজার মানুষ।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সুনাক কয়েক ডজন কট্টরপন্থী এমপিকে নিজের বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রাতরাশ বৈঠকে ডেকেছিলেন।
বেআইনি অভিবাসনসংক্রান্ত মন্ত্রী মাইকেল টমলিসন জানিয়েছেন, এই বিল অত্যন্ত কড়া।
সমালোচকেরা যা বলছেন
রক্ষণশীল দলের কট্টরপন্থীরা বলছেন, এই বিলে এটা বলা নেই, যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী ব্রিটেনে চলে আসবেন, তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে। তখন তাঁরা ব্রিটিশ আদালতে তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন। মানবাধিকারসংক্রান্ত ইউরোপীয় আদালতেও যেতে পারবেন।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে, এই পরিকল্পনা কার্যকরই করা যাবে না। তা ছাড়া এই পরিকল্পনা অনৈতিক। অবিবাসনপ্রত্যাশীদের সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার দূরের রুয়ান্ডায় পাঠানো মেনে নেওয়া যায় না। গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, রুয়ান্ডাকে কখনোই নিরাপদ দেশ বলা যায় না।
যুক্তরাজ্যের অ্য়ামনেস্টি ইন্টারন্য়াশনালের প্রধান সাচা দেশমুখ বলেছেন, 'এই পরিকল্পনায় মানবাধিকারের ধারণাকেই আক্রমণ করা হয়েছে।'
সুনাক জানিয়েছেন, হাউস অব কমন্সে বিলটি অনুমোদিত হওয়ার পর তাঁরা নতুন উদ্যমে এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোবেন। আদালতের উদ্বেগের বিষয়গুলোই মাথায় রাখা হবে।
পরিকল্পনায় যা বলা হয়েছে
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটেন থেকে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরা সেখানেই বসবাস করবেন।
যুক্তরাজ্য এরই মধ্য়ে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রুয়ান্ডাকে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের দাবি, এই নিয়ম চালু হলে অভিবাসীরা আর যুক্তরাজ্যে আসবেন না।
এই বিল নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে, তখন একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা যান। তাঁর আবেদন বিচারাধীন ছিল। এরপরই মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ব্রিটেনে অবিবাসীদের জন্য অমানবিক ব্যবস্থা চালু আছে।