ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত ও উপকূল সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স প্রকাশিত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ২৫ শতাংশ কমে প্রায় ২৫ হাজারে নেমেছে। বেশিরভাগ রুটে অভিবাসন প্রত্যাশী আগমন কমে গেছে, তবে কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় রুটে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে। যেখানে বেশিরভাগ অভিবাসন প্রত্যাশীই বাংলাদেশি।
ফ্রন্টেক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম আফ্রিকার রুটেই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অভিবাসন প্রত্যাশী আগমনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখিত সময়ে এই সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বেড়েছে।
তবে পশ্চিম বালকান রুটে অভিবাসন প্রত্যাশীদের আগমন সবচেয়ে কমেছে। এই হ্রাস গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৪ শতাংশ।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের জাতীয়তা শনাক্ত করা গেছে তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন: আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং মালির নাগরিক।
দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ হ্রাস সত্ত্বেও, পশ্চিম আফ্রিকান করিডোরটি এখনো অবৈধ অভিবাসনের জন্য সবচেয়ে সক্রিয় রুট। জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে ৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর আগমন রেকর্ড করা হয়েছে। অধিকাংশ অভিবাসন প্রত্যাশী মালি, সেনেগাল এবং গিনি থেকে এসেছেন।
কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় রুটে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অভিবাসন প্রত্যাশী আগমনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বছরওয়ারি হিসাবে এ বৃদ্ধি ৪৮ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৯০০ জন। এটি ইইউতে দ্বিতীয় সর্বাধিক সক্রিয় অভিবাসন রুট হয়ে উঠেছে। লিবিয়া এই রুটের প্রধান প্রস্থান বিন্দু, যেখানে পাচারকারীরা কর্তৃপক্ষের নজরদাবি এড়াতে শক্তিশালী স্পিডবোট ব্যবহার করছে। এই রুটে সমুদ্র পারাপারের জন্য খরচ প্রতিজনে নেওয়া হয় ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি নাগরিকেরা এই রুটে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। তাঁরা প্রায়ই লিবিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তির সুবিধা নিয়ে কাজের জন্য বৈধভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেন, এরপর সমুদ্রপথে ইউরোপের পথে যাত্রা করেন।
ফেব্রুয়ারির শেষে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুটটি ইইউতে তৃতীয় ব্যস্ততম অভিবাসন করিডোর ছিল। এ পথে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ অভিবাসন প্রত্যাশীর আগমন ঘটে। তবে, এই রুটে জাতীয়তা শনাক্তকরণ গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। অক্টোবরে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ শনাক্তকরণের শিখরে পৌঁছানোর পর, শীতকালীন আবহাওয়ার মধ্যে এই রুটে চাপ ক্রমাগত কমেছে, ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যা ২ হাজার ৭৫০–এ নেমে এসেছে।
সমুদ্র পারাপার অভিবাসন প্রত্যাশীদের জীবনে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে, যেখানে অনেকেই সংগঠিত অপরাধী নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে সমুদ্র যাত্রা করেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) অনুমান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সমুদ্রে ২৪৮ জন মারা গেছেন। গত বছর, এই সংখ্যা ২ হাজার ৩০০–এ পৌঁছেছিল।
এদিকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ কমেছে। তবে জাতীয়তা শনাক্তকরণ সামান্য বেড়েছে, ৪ হাজার ৪০০ হয়েছে।
ফ্রন্টেক্স ইউরোপের সীমান্ত রক্ষায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা আরও জোরদার করেছে। ইইউ সীমান্ত বরাবর ২ হাজার ৯০০ কর্মকর্তা মোতায়েন করেছে ফ্রান্টেক্স।