ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার জন্য একটি কৌশলগত সম্পদে পরিণত হয়েছে সোনা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার স্বর্ণের বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করলেও মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার সোনা উৎপাদনে দেশটির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
গবেষণা সংস্থা ‘র্যান্ড ইউরোপ’-এর তথ্য মতে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়া হার্ড কারেন্সি, অস্ত্র এবং অন্যান্য পণ্য সংগ্রহের জন্য সোনা ব্যবহার করছে। বিশেষ করে চীন, তুরস্ক এবং ইরানের সঙ্গে এই ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে দেশটির।
মঙ্গলবার ইউরো নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে রাশিয়া বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম সোনা রিজার্ভের মালিক ছিল। দেশটির মজুত সোনার পরিমাণ ছিল দুই হাজার টনেরও বেশি।
সোনার রিজার্ভের দিক থেকে সেই সময়টিতে প্রথম অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মজুত সোনার পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৩৩ টনের বেশি। এর পরেই ছিল যথাক্রমে জার্মানি (৩৩৫২.৬ টন), ইতালি (২৪৫১.৮ টন) এবং ফ্রান্স (২৪৩৭.০ টন)।
‘র্যান্ড ইউরোপের’ প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা প্রোগ্রামের গবেষণা নেতা জন কেনেডি বলেন, ‘২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পুরোদমে আক্রমণের আগে থেকেই রাশিয়া সোনা সংগ্রহের হার বাড়িয়ে দিয়েছিল। এক দশক ধরে তারা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সোনা রিজার্ভ তৈরি করেছে। দেশটি বিশ্বের শীর্ষ সোনা উৎপাদক হতে চেয়েছিল।’
কেনেডি আরও বলেন, ‘মস্কো সোনাকে ব্যবহার করছে যুদ্ধকালীন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি, মধ্য এশিয়া ও আফ্রিকার সোনা উৎপাদনে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রভাব বজায় রয়েছে।’
তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথরের বাণিজ্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ ছাড়াও, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সোনা উৎপাদনের গতি কমিয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেন আক্রমণের আগে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ খনন সরঞ্জামের সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৯ শতাংশ সরবরাহ করত জার্মানি। এমনকি এসব সরঞ্জামের ২১ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা হতো।
কিন্তু এখন সোনা উৎপাদনের জন্য সোভিয়েত আমলের পুরোনো খনন সরঞ্জাম এবং চীনের সরবরাহের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতি দেশটির সোনা উৎপাদনকারীদের চাহিদা পূরণে বাধা সৃষ্টি করছে।
পশ্চিমাপন্থী বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার একটি হাইব্রিড হুমকির কৌশল হিসেবে কাজ করছে সোনা। পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।