অনলাইন ডেস্ক
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন ‘কোল্ড ওয়ার বা শীতল যুদ্ধ’ উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নতুন এই শীতল যুদ্ধ যেকোনো সময় ‘তপ্ত’ হয়ে উঠতে পারে; পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পূর্ব ইউরোপের দেশ মাল্টায় অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) সম্মেলনে দেওয়া এক ভাষণে লাভরভ এ কথা বলেন।
লাভরভ বলেন, ‘পশ্চিমারা শীতল যুদ্ধের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছে, তবে এবার তা একটি উত্তপ্ত সংঘাতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ওয়াশিংটনের সামরিক মহড়া ‘পুরো ইউরেশিয়া মহাদেশকে অস্থিতিশীল করার’ চেষ্টা।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান প্রণালি এবং কোরীয় উপদ্বীপের চারপাশে স্থানীয় অংশগ্রহণের সঙ্গে সামরিক মহড়া বাড়ছে। এটি স্পষ্ট যে পুরো ইউরেশিয়া মহাদেশকে অস্থিতিশীল করার একটি প্রচেষ্টা।’
এর আগে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ইউক্রেন ইস্যুতে রেড লাইন বা বিপৎসীমা অতিক্রম না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দেন। লাভরভ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্স) বোধ হারিয়ে ফেলছে, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রেখেছিল, এটি বিপজ্জনক।
লাভরভ বলেন, ‘আমি এমনটা হলে কোনোভাবেই অবাক হব না। আমেরিকানরা এরই মধ্যে নিজেদের জন্য নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। তাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে (মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকে) এবং জেলেনস্কি অবশ্যই এটি দেখেন এবং এর সদ্ব্যবহার করেন।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তবে তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) বোঝা উচিত, তারা এখানে আমাদের বিপৎসীমা নিয়ে রসিকতা করছে। আমাদের বিপৎসীমা নিয়ে তাদের রসিকতা করা উচিত নয়।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, (মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন) কারবি বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য সমর্থন বাড়ানোর বিষয়টিকে সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত, যাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে উসকে দেওয়া না হয়। কারণ, সংঘাত বা যুদ্ধ ইউরোপে পৌঁছে যাওয়াটা দেখা হবে দুঃখজনক।
লাভরভ বলেন, তিনি আশা করেন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাব্য পরিণতি উপলব্ধি করবে ওয়াশিংটন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে সেখানে উল্লেখযোগ্য প্রভাবসম্পন্ন যুক্তি বোধসম্পন্ন লোক রয়েছে। আমি আশা করি, মার্কিন স্বার্থ বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালে রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠিয়ে আগ্রাসন শুরু করেন। তিনি এই যুদ্ধকে পশ্চিমের সঙ্গে পূর্বের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়াকে অপমান করা হয়েছে।
ইউক্রেন ও পশ্চিমারা বলছে, (যুদ্ধের নামে) পুতিন সাম্রাজ্যবাদী ধাঁচে ভূখণ্ড দখলে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বর্তমানে ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া। দেশটি বলেছে, একসময় রুশ সাম্রাজ্যের অংশ থাকা এসব ভূখণ্ড এখন আবার রাশিয়ার অংশ হয়েছে এবং এগুলো আর কখনোই ফেরত দেওয়া হবে না।