ফ্রান্সের চরম ডানপন্থী নেত্রী ও ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মেরিন ল পেনকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তহবিলের ৩০ লাখ ইউরো (প্রায় ২.৫১ মিলিয়ন পাউন্ড) আত্মসাতের মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাঁকে ১ লক্ষ ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে।
তবে পেনের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হলো তিনি ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। এই মামলায় ল পেনের ওপর ৫ বছরের রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে দেশজুড়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আরএন দলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্ডান বার্দেল্লা আগামী রোববার প্যারিসের কেন্দ্রে বড় সমাবেশের ডাক দিয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের আপিল আদালত সোমবার (স্থানীয় সময়) এই রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২.৯ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩৪ কোটি টাকা) তহবিল আত্মসাতের ঘটনায় ল পেন জড়িত ছিলেন। এর ফলে তাঁকে ১ লক্ষ ইউরো জরিমানা ও ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে (এর মধ্যে ২ বছর স্থগিত)।
ল পেন এই রায়কে ‘আরএন-কে ক্ষমতায় যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দাবি করেন, ‘ক্ষমতাসীন দল আমাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করেছে, কারণ আমরা নির্বাচনে জয়ের খুব কাছাকাছি।’ তিনি আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরএন দলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ২৯ বছর বয়সী বার্দেল্লা এই রায়কে ‘বিচারকের স্বৈরাচার’ বলে নিন্দা জানান। তিনি রোববার আইফেল টাওয়ারের কাছে ভবান স্কয়ারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানান। তবে তিনি ল পেনের স্থলাভিষিক্ত হবেন কিনা সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাননি।
সাম্প্রতিক একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ আরএন সমর্থক বার্দেল্লাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। তিনি মোট ভোটের ৩৬ শতাংশ পেতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে ল পেন স্পষ্ট করেছেন, তিনি সহজে হার মানবেন না।
এদিকে ল পেনের বিরুদ্ধে আদালতের এই রায়ের পর কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। হাঙ্গেরিয়ান প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ল পেনের সমর্থনে কথা বলেছেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কেউই এমন সিদ্ধান্তে আনন্দিত হতে পারেন না। এই রায়ে লক্ষাধিক ভোটারের প্রতিনিধিত্বকে হরণ করা হয়েছে।’