ডয়চে ভেলে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন শরণার্থী নীতি কার্যকর হলে মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, সেনেগাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো কিছু দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বহিঃসীমানায়ই নাকচ হতে পারে ৷ যারা ঢুকতে পারবেন, তাঁদেরও অন্য দেশে স্থানান্তরিত করা যাবে ৷
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের জের ধরে ২০১৫ সালে শরণার্থীর ঢল ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দিশেহারা করে দিয়েছিল ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবার বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সার্বিক ও সুসংহত শরণার্থী নীতি প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে এই রাষ্ট্রজোট ৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার লুক্সেমবার্গে ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এক বোঝাপড়া সম্ভব হলো ৷ এবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইন অনুমোদন করে সেই বোঝাপড়া কার্যকর করতে হবে ৷ আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগেই সেই আইন পাস করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৷
ইইউর অভিন্ন শরণার্থী নীতির রূপরেখার মূলমন্ত্র হলো, শরণার্থীদের প্রশ্নে সব সদস্য দেশ পরস্পরের সহায়তা করতে বাধ্য ৷ সেই কাজ দুভাবে করা যাবে ৷ গ্রিস ও ইতালির মতো দেশে শরণার্থীর ঢল নামলে পোল্যান্ড বা সুইডেনের মতো অন্য সদস্য দেশ তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে আশ্রয় দিতে পারে ৷ ফলে শরণার্থীদের আরও সুষম বণ্টন সম্ভব হবে ৷ শরণার্থী গ্রহণ করতে না চাইলে কোনো দেশ আর্থিক সহায়তার মাধ্যমেও সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে ৷ শরণার্থীপ্রতি ২০ হাজার ইউরো ইইউ তহবিলে জমা করে দায়িত্ব পালন করতে পারে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো দেশ ৷
ইইউ দেশগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার আরেকটি অংশ চরম বিতর্কের কারণ হয়ে উঠেছে ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমানায় শরণার্থীদের আশ্রয়ের আবেদন দ্রুত বিবেচনা করে সেখান থেকেই ‘কম সম্ভাবনা’র আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে ৷ অর্থাৎ যেসব শরণার্থী ‘নিরাপদ' হিসেবে বিবেচিত দেশ থেকে আসছেন, অন্য কোনো ন্যায্য কারণ না থাকলে তাঁদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে ৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি দেশ সুইডেন এ দুটি মৌলিক প্রস্তাবের মাধ্যমে ঐকমত্য সম্ভব করতে পেরেছে ৷ বেলজিয়ামের শরণার্থীদের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী নিকোল ডে মোর একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, সেনেগাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশের নাগরিকদের আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতির সম্ভাবনা কম ৷
ইউরোপকে অভেদ্য দুর্গ হিসেবে প্রস্তুত করার এমন উদ্যোগের সমালোচনা করছে অনেক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল ৷ অক্সফাম জানিয়েছে, ইইউর আশ্রয় প্রণালির গভীর দুর্বলতা না কাটিয়ে শরণার্থীদের আগমনের পথে বাধা সৃষ্টি করার সংকেত দিচ্ছে এই রাষ্ট্রজোট ৷ জার্মানির জোট সরকারের শরিক সবুজ দলের মধ্যেও এ বিষয়টিকে নিয়ে গভীর অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে ৷
দলের নেতা ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনাগোনা বেয়ারবক অবশ্য ইইউ দেশগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, এমন আপস মীমাংসা মোটেই সহজ ছিল না৷ জার্মানির ফেডারেল সরকার একাই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে বোঝাপড়া একেবারেই ভিন্ন হতো ৷
বেয়ারবক আরও বলেন, জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার ইউরোপীয় বহিঃসীমানায় শরণার্থীদের আটক করে তাঁদের আবেদন বিবেচনার প্রস্তাবে সায় না দিলে অন্য সদস্য দেশগুলো শরণার্থীদের সুষম বণ্টনের প্রস্তাব মেনে নিত না৷