বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ ‘এ ২৩ এ’ বর্তমানে দক্ষিণ আটলান্টিকের সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে কয়েক মাস ধরে এটি সমুদ্রের পানির নিচে একটি পাহাড়ের আশপাশে আটকে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
আইসবার্গটির গতিবিধি নিয়ে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের ফিজিক্যাল ওশেনোগ্রাফার অ্যান্ড্রু মাইজার্স বলেছেন, ‘এটি এখন একটি স্রোতের বক্রতার মধ্যে রয়েছে এবং দ্বীপের দিকে সরাসরি অগ্রসর হচ্ছে না। তবে স্রোতের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী এটি শিগগির আবার দ্বীপের দিকে এগোতে পারে।’
সাউথ জর্জিয়া সরকারের জাহাজ ফারোসের ক্যাপ্টেন সাইমন ওয়ালেস জানিয়েছেন, যদি আইসবার্গটি বর্তমান আকারে থাকে, তবে এটি ট্র্যাক করা সম্ভব। তবে ভেঙে ছোট ছোট টুকরো হয়ে গেলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ছোট আইসবার্গগুলো শনাক্ত করা কঠিন এবং এগুলো আরও বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলো স্রোতের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা সাউথ জর্জিয়ার উপসাগর ও ফিওরডগুলোতে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।’
সিএনএন জানিয়েছে, ‘এ ২৩ এ’ এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ হিসেবে চিহ্নিত। এর আয়তন ৩ হাজার ৬৭২ বর্গকিলোমিটার, যা লন্ডনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বড়।
১৯৮৬ সালে এটি অ্যান্টার্কটিকার ফিলশনার-রনে বরফস্তর থেকে ভেঙে আলাদা হয়ে যায়। পরে এটি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরের তলদেশে আটকে ছিল। বরফ গলে কিছুটা সংকুচিত হয়ে পরে এটি স্রোতে ভাসতে শুরু করে।
গত বছর এটি আবারও পানির নিচে একটি পর্বতের ঘূর্ণমান স্রোতের মধ্যে আটকে যায়। অবশেষে গত ডিসেম্বরে ঘূর্ণমান স্রোতের ভরবেগ থেকে এটি মুক্ত হয় এবং সমুদ্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে যেতে শুরু করেছে।
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যদি আইসবার্গটি সাউথ জর্জিয়ার উপকূলের মহাদেশীয় শেলফে আটকে যায়, তবে এটি ওই দ্বীপের সীল ও পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীদের খাবারের নিশ্চয়তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তবে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে বলেছে, এভাবে আটকে গেলেও তা সাময়িক সময়ের জন্য হতে পারে এবং দ্বীপের নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে এর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকবে।
সাউথ জর্জিয়া ও সাউথ স্যান্ডউইচ আইল্যান্ডস সরকারের মৎস্য ও পরিবেশবিষয়ক পরিচালক মার্ক বেলচিয়ার জানিয়েছেন, এই আইসবার্গ শিপিং এবং ফিশিং কার্যক্রমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আইসবার্গ প্রাকৃতিক গঠন চক্রেরই অংশ। তবে অ্যান্টার্কটিকায় জলবায়ু পরিবর্তন গভীর পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তন বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখ্য, সাউথ জর্জিয়া ও সাউথ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল। বিজ্ঞানীরা তাই আইসবার্গটির গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।