ইতালির মিলানের সান ভিত্তোরে কারাগারে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন খ্রিষ্টান সন্ন্যাসিনী (নান) আন্না দোনেলি। অপরাধীদের চারিত্রিক সংশোধনের কাজে অনেকটা সময় কারাগারে কাজ করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে মিলানের বার্ষিক নাগরিক পুরস্কার ‘গোল্ডেন পানেত্তোন’ পেয়েছিলেন আন্না।
আজ শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের ক্যালাব্রিয়ার কুখ্যাত ‘এনদ্রাংগেতা’ মাফিয়া চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে সন্ন্যাসিনী আন্নাসহ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। তবে বাকি ২৩ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কারাবন্দী অপরাধীদের সঙ্গে মাফিয়াদের সম্পর্ক স্থাপনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছেন ৫৭ বছর বয়সী আন্না।
পুলিশ জানায়, ধর্মীয় ভূমিকার কারণে কারাগারে অবাধ যাতায়াত ছিল অভিযুক্ত সন্ন্যাসিনীর। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি মাফিয়া ও অপরাধীদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিতেন।
পুলিশ জানায়, লোম্বার্দি, ভেনেতো ও কালাব্রিয়ায় চালানো এ অভিযানে দুই রাজনীতিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ১৮ লাখ ইউরো ((বাংলাদেশি টাকায় ২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রায়) মূল্যের জিনিসপত্রও জব্দ করা হয়।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাফিয়া সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক, ভোট কেনা, অবৈধ অস্ত্র, অর্থ পাচার, সুদের কারবার, মাদক ব্যবসার অভিযোগ এনেছে ইতালির পুলিশ।
ইউরোপের অন্যতম প্রতাপশালী ও বিপজ্জনক অপরাধচক্র এনদ্রাংগেতার কার্যক্রম নিয়ে চার বছর ধরে তদন্তের ভিত্তিতে এ অভিযান চলছে। অভিযানে অস্ত্র ও মাদক খোঁজার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুর এবং নগদ অর্থ খুঁজে বের করার জন্য বিশেষ ‘ক্যাশ ডগ’ ইউনিট ব্যবহার করে উত্তর ইতালির বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছেন শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।
ইতালির কালাব্রিয়ার দরিদ্র অঞ্চল থেকে উদ্ভূত এনদ্রাংগেতা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর অপরাধচক্র এবং আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের একটি প্রধান নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, এই মাফিয়া দল ভাঙারি ব্যবসাকে ব্যবহার করে প্রায় ১২ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় ১৫১ কোটি টাকা প্রায়) পাচার করেছে।
২০২১ সালে ইতালির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ মাফিয়া ট্রায়াল হয়, যার নাম ‘ম্যাক্সি ট্রায়াল’। এটি এনদ্রাংগেতা মাফিয়া সংগঠনের বিরুদ্ধে ছিল। এ মামলায় ৩৫০ জন অভিযুক্ত ছিলেন, যাঁদের মধ্যে মাফিয়ার শীর্ষ নেতাসহ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবীও ছিলেন। অবশেষে ২০২৩ সালের নভেম্বরে এ মামলার রায়ে ২০০ জনেরও বেশি অভিযুক্তকে সম্মিলিতভাবে ২ হাজার ২০০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।