অনলাইন ডেস্ক
১৪৮৩ সালে ব্রিটিশ রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড যখন মারা যান তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪০ বছর। মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর ১২ বছরের পুত্র পঞ্চম এডওয়ার্ড। যদিও কয়েক মাসের মধ্যেই দুর্বল ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে পঞ্চম এডওয়ার্ডেরও মৃত্যু হয়।
এদিকে রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ডের মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ প্রচলিত ছিল কয়েক শ বছর ধরে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কারওরই কোনো ধারণা ছিল না। ধারণা করা হতো—তিনি হয়তো ম্যালেরিয়ায় মারা গেছেন। আবার কেউ বলতেন, বিষপ্রয়োগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দ্য মিরর জানিয়েছে, ৫৪০ বছর পর রাজার মৃত্যুর প্রকৃত কারণটি জানা গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিছু নথিপত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, ম্যালেরিয়া কিংবা বিষ প্রয়োগ নয়—রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ডের মৃত্যু ঘটেছিল সিলিফিসের মতো একটি যৌন রোগে। অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারের ফলে এই রোগটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমিত হতে পারে। মধ্যযুগে ব্রিটিশদের মধ্যে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল।
কিন্তু প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, রাজার মৃত্যুর ১০ বছর পর ১৪৯৩ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা ভ্রমণ করলে তাঁর নাবিকদের মাধ্যমে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জগুলোতে প্রথমবারের মতো যৌনবাহিত সিফিলিসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তবে নতুন গবেষণা বলছে, সিফিলিসের আদি রোগ ট্রেপোনেম্যাটোসিস প্রাচীনকাল থেকেই ইউরোপ এবং আফ্রিকাতে ছিল। এডওয়ার্ডের মৃত্যুর সঙ্গেও সিফিলিসের যোগসূত্র ছিল।
এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ মেরিলিন স্যালমন জানিয়েছেন, কয়েক শ বছরের পুরোনো এমন কিছু নথি আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলোতে রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ডের জীবনের শেষ মাসগুলোর পরিস্থিতি লিপিবদ্ধ আছে। নথিগুলোতে রাজার শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন কিছু লক্ষণের বর্ণনা আছে—যা থেকে বোঝা যায় তিনি সিফিলিস রোগটির শেষ পর্যায়ে ভুগছিলেন। রোগটির সংক্রমণ ঘটলে শরীরে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। চিকিৎসা না করালে শেষ পর্যন্ত এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকেও বিকল করে দিতে পারে।
রাজ দরবার থেকে লেখা একটি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজা এডওয়ার্ড বৃদ্ধ ছিলেন না এবং তিনি এমন একটি রোগে ভুগছিলেন যা চিকিৎসকেরা নির্ণয় করতে পারেননি। জীবনের শেষ কিছুদিন তিনি বিছানায় পড়ে ছিলেন এবং ৯ এপ্রিল প্রাণ ত্যাগ করেন। রোগের অস্বাভাবিক এসব পরিস্থিতিকে সিফিলিসের লক্ষণের সঙ্গেই তুলনা করেন মেরিলিন স্যালমন। তখন পর্যন্ত এই রোগ সম্পর্কে ব্রিটিশরা কিছুই জানতেন না। তবে সিফিলিসের ওই ধরনটিকে ট্রেপোনেম্যাটোসিস হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন মেরিলিন।