আজকের পত্রিকা ডেস্ক
কয়েকদিন ধরে একের পর এক হাসপাতালে হামলার জেরে সংকট আরও বেড়েছে ফিলিস্তিনের গাজাজুড়ে। এতে স্বাস্থ্যসংকটও বেড়েছে। উপত্যকার শরণার্থীশিবির ও স্কুলেও চালানো হচ্ছে হামলা-অভিযান। জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে হামলায় অন্তত ১৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে গতকাল শুক্রবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের ইবনে সিনা হাসপাতালে হামলার আগে জেনিন শরণার্থীশিবিরেও অভিযান চালায় ইসরায়েলি সেনারা।
আর গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় গত বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। গত কয়েক দিন ট্যাংক নিয়ে হাসপাতালটির বাইরে ছিল ইসরায়েলি সেনারা। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালটির ভেতরে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলের ট্যাংকগুলো।
উল্লেখ্য, হামাসের সুড়ঙ্গ খুঁজতে ইসরায়েলি সেনারা গত বুধবার আল-শিফায় অনুসন্ধান আরও জোরদার করে। একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হাসপাতাল চত্বর থেকে হামাসের অস্ত্র, গ্রেনেড ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে তারা। যদিও অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস থেকে তারেক আবু আজুম গতকাল আল জাজিরাকে বলেন, এবার গাজার উত্তরাঞ্চলের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে। এতে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
পশ্চিম তীরের ইবনে সিনা হাসপাতালে ঢুকেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। এতে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।
পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক সারা খায়রাত বলেন, ইসরায়েলি সেনারা অভিযান শুরুর পর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত উঁচু করে ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। ওই সাংবাদিক আরও বলেন, জেনিন শরণার্থীশিবিরে প্রায় প্রতিদিনই তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। জেনিন আশ্রয়শিবিরে হতাহতের ঘটনার সূত্রপাত ৭ অক্টোবরের পর নয়, বরং এর আগে থেকেই।
প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের যাতে সেবা দিতে না পারে সে জন্য জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সকে চলতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
চিকিৎসাসামগ্রীর মারাত্মক সংকটের পাশাপাশি নির্বিচার ইসরায়েলি হামলার জেরে গাজার বেশির ভাগ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। যে ক’টিতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে, সেগুলোতেও রোগীদের চিকিৎসাদানের জন্য প্রয়োজনীয় শয্যা বা কক্ষ নেই।
মেঝেতে শুইয়ে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আসার আগে যেভাবে চিকিৎসাদান চলত, সেভাবেই চলছে বর্তমানে চিকিৎসা। হাসপাতালে একফোঁটা পানিও নেই, নেই কোনো অক্সিজেন। খাবারও প্রায় ফুরিয়ে গেছে। অসুস্থ কিংবা আহত হয়ে হাসপাতালে না এলে খাদ্যাভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেখানে আশ্রয় নেওয়া লোকজন, বিশেষ করে শিশুরা। ইসরায়েলের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে হাজার হাজার মানুষ এই হাসপাতালগুলোতে আশ্রয় নেন।
অন্যদিকে, গাজা সিটির দক্ষিণাঞ্চলের জেইতুন এলাকার আল-ফালাহ স্কুলেও হামলা হয়েছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত লোক আশ্রয়
নেওয়া এই স্কুলে হামলায় অনেক হতাহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল হামলা শুরুর পর গত বুধবার পর্যন্ত ১১ হাজার ৪৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্য ৪৭০ জনই শিশু। আহত হয়েছেন ২৯ হাজার মানুষ। ইসরায়েলের হামলা, স্থল অভিযান ও সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের জেরে গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে কেবল ৯টি এখন আংশিকভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।