আফ্রিকা থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের পথে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় একটি ছোট্ট নৌকায় জন্ম নিয়েছে এক শিশু। নৌকাটিতে এ সময় ৬০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ঠাসাঠাসি করে ছিলেন। পরে স্পেনের ল্যানজারোট উপকূলে সদ্য জন্ম নেওয়া ওই শিশুটিকে তার মা ও অন্যান্য যাত্রী সহ উদ্ধার করা হয়।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত ৬ জানুয়ারি ল্যানজারোট উপকূলে ছোট্ট ওই নৌকাটিকে চিহ্নিত করেছিল স্প্যানিশ উদ্ধার সংস্থা সালভামেন্তো মারিতিমো। নৌকাটিতে থাকা ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে ১৪ জন ছিলেন নারী এবং নবজাতকসহ ৪ শিশু।
নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধারের দিনটিতে স্পেনে পালিত হচ্ছিল শিশুদের জন্য বিশেষ দিবস ‘এপিফ্যানি’। বাইবেলকে অনুসরণ করে এদিনটিতে স্প্যানিশ শিশুরা তিন জ্ঞানী রাজা বা ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পায়। এমন দিনে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনাটি ইতিবাচক এবং গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ।
তালিয়া নামে উদ্ধারকারী জাহাজের ক্যাপ্টেন ডমিঙ্গো ট্রুজিলো জানান, তাঁর দল জানত নৌকায় একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী আছেন। তবে তাঁরা জানতেন না, ওই নারী ইতিমধ্যেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
ট্রুজিলো বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়ে দেখলাম সম্পূর্ণ নগ্ন একটি শিশু, যাকে ১০, ১৫ বা ২০ মিনিট আগেই জন্ম দেওয়া হয়েছে।’
ট্রুজিলো জানান, ঠাসাঠাসি করা নৌকাটির পাটাতনে শুয়েছিলেন শিশুটির মা। আর শিশুটি মায়ের পাশেই থাকা আরেকজনের কোলে ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি শিশুটিকে ঢেকে আমার বুকে চেপে ধরে পিঠে চাপড় দিই, যেন সে কান্না থামায়।’
উদ্ধারকারী দলের চিকিৎসকেরা পরে মা ও শিশুটিকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হাসপাতালে পাঠান। হেলিকপ্টারের কমান্ডার আলভারো সেরানো পেরেজ বলেন, ‘তিন রাজা দিবসে এটি ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।’
উদ্ধার সংস্থা সালভামেন্তো মারিতিমো এক পোস্টে লিখেছে, ‘ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের পথে সমুদ্রযাত্রার মাঝেই একটি শিশুর জন্ম...। এটি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।’
আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলের কাছে অবস্থিত সাতটি স্প্যানিশ দ্বীপে রেকর্ডসংখ্যক শরণার্থীর আগমন ঘটছে। ২০২৪ সালে ৪৬ হাজার ৮৪৩ জন মানুষ ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছায়। এই সংখ্যাটি ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
মাইগ্রেশন বিষয়ক এনজিও কামিনান্দো ফ্রন্তেরাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্পেনে সমুদ্রপথে পৌঁছানোর চেষ্টায় অন্তত ১০ হাজার ৪৫৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। এই মৃত্যুহার ২০২৩ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি এবং ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া সংস্থাটির রেকর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মৃত্যুহার বাড়ার প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, ভঙ্গুর নৌকা, বিপজ্জনক সমুদ্র এবং উদ্ধারকারীদের পর্যাপ্ত সংস্থানের অভাব এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী।