হোম > বিশ্ব > ভারত

করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ কুম্ভমেলা

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। গতমাসে দেশটিতে যখন সংক্রমণ বাড়ছিল তখন উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই আয়োজন হয় কুম্ভমেলার। তখন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ হয়ে উঠতে পারে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় এই মিলনক্ষেত্র।

শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কাই সত্যি হল। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, যে কুম্ভ মেলা থেকে ফেরত ব্যক্তিরাই করোনা পজিটিভ হয়ে ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, কুম্ভমেলা ফেরত ব্যক্তিরাই ভারতে সুপার স্প্রেডার হিসেবে কাজ করেছে।

গত ১৫ মার্চ মহন্ত শঙ্কর নামের এক হিন্দু পুরোহিত কুম্ভমেলায় অংশ নিতে হরিদ্বারে পৌঁছান। পরে ৮ এপ্রিল ৮০ বছর বয়সী মহন্তের করোনা শনাক্ত হয়। কুম্ভমেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার মাত্র চারদিন আগে মহন্ত শঙ্করের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। পরে তাঁকে একটি তাবুতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

কিন্তু আইসোলেশনের নিয়ম না মেনে মহন্ত সরকার তাঁর ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সেখান থেকে ট্রেনে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িয়ে দিয়ে তিনি ভারানসি পৌঁছান। সেখানে রেলস্টেশনে মহন্ত শঙ্করকে নিতে আসেন তাঁর ছেলে নগেন্দ্র পাঠাক। পরে তাঁরা এক সঙ্গে একটি ট্যাক্সিতে করে ভারানসি রেল স্টেশন থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর জেলায় নিজ গ্রামে পৌছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনালাপকালে মহন্ত দাস বলেন, বাড়িতে ফেরার পর তিনি কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন।

তিনি দাবি করেন, তাঁর কাছ থেকে কেউ করোনায় সংক্রমিত হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর মহন্তের ছেলে এবং ওই গ্রামের কয়েকজনের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়।

মহন্তের গ্রামে করোনার সংক্রমণের জন্য তাঁর দায় থাকতেও পারে নাও পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পজিটিভ হওয়ার পর মহন্ত যে জনবহুল ট্রেন দিয়ে এসেছেন এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ ছিল। এরপরে তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গেও একসঙ্গে ট্যাক্সিতে এসেছেন।

এ নিয়ে মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. ললিত কান্ত বলেন, মাস্ক ছাড়া বহু পুণ্যার্থী গঙ্গার তীরে হাজির হয়েছিলেন। যা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য আদর্শ।

কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, কুম্ভ মেলায় দুই হাজার ৬৪২ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। এদের মধ্যে শীর্ষ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ছিলেন।

ভারতের উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ্ এবং সাবেক রানি কোমাল শাহ কুম্ভমেলায় গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া বলিউডের জনপ্রিয় শ্রাবণ রাথোর কুম্ভমেলা থেকে ফিরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ে একটি হাসপাতালে মারা যান।

এমন পরিস্থিতিতে কুম্ভমেলাফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ দেয় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার।

রাজস্থান সরকারের পক্ষ বলা হচ্ছে, কুম্ভমেলাফেরত ব্যক্তিরা দ্রুত রাজ্যটিতে করোনা ছড়িয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।

এদিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যাতেও কুম্ভমেলা থেকে আসা ২৪ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়। গুজরাটে কুম্ভমেলা থেকে ফেরত একটি ট্রেনে ৩১৩ জন যাত্রীদের মধ্যে ৩৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছিল। ভারতের মধ্যে প্রদেশে কুম্ভমেলা থেকে ফেরা ৯৯ শতাংশ মানুষের মধ্যেই করোনা শনাক্ত হয়। সেখানে কুম্ভমেলা থেকে ফিরে আসার পর ২২ জন ব্যক্তি পালিয়ে যান যাদেরকে এখনো খোঁজা হচ্ছে।

মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. ললিত কান্ত বলেন, এটি বিপর্যয়কর। কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই আমি বলতে পারি কুম্ভমেলার কারণেই ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে কুম্ভমেলায় বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

গত ১২ এপ্রিল যখন ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে কুম্ভমেলা শুরু হয় সেদিনই ভারতে এক লাখ ৬৮ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। ওইদিন করোনা রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে বিশ্ব তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ভারত।

কুম্ভমেলা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে একজন শীর্ষ ধর্মগুরুর মৃত্যু হয়। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতীকী কুম্ভমেলা করার আহ্বান জানান। তবে এর মধ্যে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে।

গত সপ্তাহে কুম্ভমেলার আয়োজকরা জানান, চলতি বছর প্রায় ৯১ লাখ পুণ্যার্থী হরিদ্বার আসেন। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার মধ্যে কুম্ভমেলার আয়োজনে অনুমতি দেওয়া একটি হাস্যোদ্রেককর বিষয় ছিল।

এ নিয়ে উত্তরাখণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত জানান, তাঁর পরিকল্পনা ছিল সীমিতভাবে প্রতীকী উপায়ে কুম্ভমেলার আয়োজন করার। কিন্তু কুম্ভমেলা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত। ক্ষমতা নেওয়ার পর কুম্ভ মেলা নিয়ে তিনি বলেছিলেন, মা গঙ্গার আশীর্বাদে করোনা আসবে না।

উত্তরাখণ্ডভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অনুপ নটিয়াল জানান, ১৫ মার্চ ২০২০ সালে উত্তরাখণ্ডে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। চলতি বছরের ১৪ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে ৫৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে কুম্ভমেলার শেষ সপ্তাহে অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে ৩৮ হাজার ৫৮১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

সাইফকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক বাংলাদেশি, দাবি মুম্বাই পুলিশের

মনু নদীর পাশে ‘বাঁধ দিচ্ছে বাংলাদেশ’, বন্যার আতঙ্কে ত্রিপুরা

ভারতে এয়ার শো উপলক্ষে বেঙ্গালুরুতে মাংস বিক্রি বন্ধ

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে রায়

মহাসাগরে ‘চীনের আধিপত্য’ ঠেকানোই এখন ভারতের মূল অগ্রাধিকার: রাজনাথ সিং

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নিহত ১২ ও নিখোঁজ ১৬ ভারতীয়, জানাল মোদি সরকার

হোয়াইট হাউস আক্রমণের চেষ্টা: ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাৎসি যুবকের ৮ বছরের জেল

ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে ছত্তিশগড়ে ১২ মাওবাদী নিহত

কুম্ভমেলার ভাইরাল সাধুরা: আইআইটি বাবা থেকে অ্যাম্বাসেডর বাবা

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধের ঘোষণার পরপরই আদানির শেয়ারে ব্যাপক উল্লম্ফন

সেকশন