Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব > ভারত

ভারতে যৌতুক আছে ৫০ বছর আগের মতোই, তবে পরিমাণ বাড়েনি

অনলাইন ডেস্ক

ভারতে যৌতুক আছে ৫০ বছর আগের মতোই, তবে পরিমাণ বাড়েনি

ভারতে যৌতুকপ্রথা একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক সমস্যা। আইন করে এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে যৌতুক নেওয়ার প্রবণতা খুব একটা কমেনি, বরং কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক অবস্থা ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে বেড়েছে। প্রায় অর্ধশতকের মধ্যেও যৌতুকের পরিমাণে খুব একটা হেরফের হয়নি। যদিও এই সময়ের মধ্যে ভারতে অনেক কিছু বদলে গেছে। অর্থনীতির আকার বেড়েছে। মাথাপিছু গড় আয় ও জীবনযাত্রার গড় ব্যয় দুটোই বেড়েছে। সামান্য মূল্যস্ফীতিও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, কিন্তু যৌতুকের গড় পরিমাণ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। ১৯৬০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ভারতের গ্রামাঞ্চলে অনুষ্ঠিত ৪০ হাজার বিয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬১ সাল থেকে ভারতে যৌতুক বেআইনি হলেও দেশটির মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ বিয়েতেই যৌতুক দেওয়া-নেওয়া হয়েছে।

যৌতুক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কয়েক শ বছরের পুরোনো প্রথা। কনেপক্ষ যৌতুক হিসেবে বরপক্ষকে নগদ টাকা, কাপড়, গয়না ইত্যাদি দিয়ে থাকে। যৌতুকের কারণে নারীরা স্বামীর ঘরে নির্যাতনের শিকার হন। এ নিয়ে খুনও হতে হয় তাঁদের। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় ১৭টি রাজ্যের যৌতুকসংক্রান্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা। এসব রাজ্যে ভারতের প্রায় ৯৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বাস। গবেষণায় মূলত গ্রামের বিয়েগুলোতে আলোকপাত করা হয়েছে। 

গবেষকেরা বিয়ের সময় বরপক্ষ থেকে কনেপক্ষকে দেওয়া উপহারের সঙ্গে কনেপক্ষ থেকে বরপক্ষকে দেওয়া উপহারের পার্থক্যকে যৌতুক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কনেপক্ষের খরচের পরিমাণ বরপক্ষের তুলনায় অনেক বেশি। 
 
গবেষকেরা দেখেছেন, ১৯৭৫ সালের আগে এবং ২০০০ সালের পরে ভারতে কিছু মূল্যস্ফীতি হলেও দেশটিতে যৌতুকের গড় পরিমাণ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের একটি বরের পরিবার কনেপক্ষকে গড়ে প্রায় ৫ হাজার রুপি সমমূল্যের উপহার দেয়। কিন্তু কনেপক্ষ বরপক্ষকে গড়ে প্রায় ৩২ হাজার রুপি সমমূল্যের উপহার দেয়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, ভারতে একটি কনে পরিবারকে প্রায় ২৭ হাজার রুপি যৌতুক দিতে হয়। 

যৌতুকের ক্ষতিকর প্রভাব কনেপক্ষের পারিবারিক সঞ্চয় এবং আয়ের ওপরেও পড়ে। ২০০৭ সালের হিসাবে, ভারতের গ্রামাঞ্চলে যৌতুকের গড় পরিমাণ পরিবারগুলোর বার্ষিক আয়ের প্রায় ১৪ শতাংশের সমান। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই দেখা যায়, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্যই পরিবার বহুদিন ধরে অর্থ সঞ্চয় করে। অর্থাৎ পরিবারের সঞ্চয়ের একটি বড় অংশই কন্যার বিয়ের পেছনে ব্যয় হয় বলে ধরে নেওয়া যায়। 

বিশ্বব্যাংকের গবেষক দলের সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. অনুকৃতি বলেন, মানুষের আয়ের হিসাবে যৌতুকের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। কারণ ভারতে গড়ে গ্রামীণ আয় বেড়েছে। তবে এটি গড়ে হিসাব করা। যৌতুক কীভাবে পরিবারের আয়ে প্রভাব ফেলে, তা দেখতে হলে আমাদের আরও বেশি পরিবারের আয়–ব্যয়ের হিসাব দরকার। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে সেটি নেই। 

ভারতে বিয়েপ্রথার চিত্র:

  • ভারতে বেশির ভাগ পুরুষই একসঙ্গে একটির বেশি স্ত্রী রাখেন না।
  • দেশটিতে প্রায় ১ শতাংশের কম বিবাবিচ্ছেদ হয়।
  • কনে ও বর নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাবা ও মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
  • ৯০ শতাংশের বেশি কনে বিয়ের পর স্বামীর বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকেন।
  • ৮৫ শতাংশের বেশি নারীর নিজ গ্রামের বাইরে বিয়ে হয়।
  • ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশ বিয়ে একই জেলার মধ্যে হয়।


২০০৮ সালের পর ভারতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, যৌতুক দেওয়ার পরিমাণে আজও খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভারতের সব প্রধান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেই যৌতুকপ্রথা রয়েছে। তবে এর মধ্যে শিখ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ সবচেয়ে বেশি যৌতুক দেয়। এর পরই রয়েছে হিন্দু ও মুসলিমদের অবস্থান। 

গবেষণায় দেখা যায়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যৌতুকের পরিমাণে পার্থক্য আছে। দেশটির গড়ে সবচেয়ে বেশি যৌতুক দেওয়া হয় কেরালা রাজ্যে। হরিয়ানা, পাঞ্জাব, গুজরাটেও বেশি পরিমাণে যৌতুক দেওয়া হয়। তবে ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে যৌতুকের পরিমাণ কমেছে। 

ড. অনুকৃতি বলেন, `এই পার্থক্যগুলো কেন, তা নিয়ে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। আমরা আশা করছি, আরও গবেষণা করলে এসব প্রশ্নের উত্তর পাব।' 

গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় অর্থনীতিবিদ গৌরব চিপ্লুঙ্কার ও জেফরি ওয়েবার ৭৪ হাজারের বেশি বিয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে কীভাবে যৌতুকপ্রথা বিবর্তিত হয়েছে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৩০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে ভারতে যৌতুকের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭ সালের পর যৌতুকের পরিমাণ কমতে থাকে। 

ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৫০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ভারতে মোট যৌতুকের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। 

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় ভারত, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়: রাজনাথ সিং

ভারতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ইসরায়েলি নারীসহ ২ জন

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশে ট্রানজিট চায় মেঘালয় সরকার

ছাদ থেকে লাফিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার ‘আত্মহত্যা’

ভারতে হোয়াটসঅ্যাপে আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা ব্যবসা, নির্বিকার মেটা

উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া এখন চীনে: ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর

‘বাংলাদেশি’ ধরতে পুলিশের ঘন ঘন তল্লাশি, অতিষ্ঠ দিল্লির বস্তিবাসী

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

ট্রিলিয়ন ডলারের ধস ভারতের শেয়ারবাজারে, মধ্যবিত্তের মাথায় হাত